অর্থনীতি

দুর্বলে দুর্বলে মিলে সবল হওয়া যায় না

‘ব্যাংকের সংখ্যার চেয়ে শাখার গুরুত্ব বেশি। বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর শাখা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। একটি ব্যাংকের পাঁচটি শাখাও থাকতে পারে আবার আরেকটি ব্যাংকের ৫শ শাখাও থাকতে পারে। মূলত, শাখা দিয়ে ব্যাংক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হয়।’

Advertisement

বলছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ। একাধিক ব্যাংকের একীভূত হওয়া না হওয়া নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া হয় এই বিশ্লেষকের।

একটি ভুল ধারণা দেশের মধ্যে চালু আছে। অনেকেই বলেন দেশের মধ্যে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। একাধিক ব্যাংক একীভূত হলেই ব্যাংকের সংখ্যা কমে যাবে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।

ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ, ‘ব্যাংক বা যে কোনো কোম্পানি একীভূত হওয়া নতুন কিছু নয়। দেশে দেশে একাধিক ব্যাংক বা কোম্পানি একীভূত হয়ে আসছে। আমাদের দেশেও কানাডার একটি ব্যাংক কিনে নিয়েছিল ব্যাংক এশিয়া। তার মানে আমাদের এখানেও এরকম নজির আছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদের দায় জনগণের ওপর চাপবে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ ব্যাংক এবার সোনালী ব্যাংকে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল একীভূত হওয়ার পর কী হবে পদ্মা ব্যাংকের কর্মীদের?

তবে এখানে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশে যেভাবে একীভূত করার আলোচনা এখন উঠেছে, তা যথার্থ কি না? সাধারণত দুটি পক্ষ আলোচনা করে তাদের মধ্যে সমঝোতা হলেই একত্রিত হতে পারে। এটি একটি ধরন। আরেকটি ধরন হলো একটি দুর্বল কোম্পানি বা ব্যাংককে আরেকটি সবল প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়।’

‘এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে হচ্ছে নাকি দুটি ব্যাংকের মধ্যকার সমঝোতার মাধ্যমে হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। সমঝোতা হলে তো কোনো কোনো ব্যাংক আপত্তি করার কথা নয়। কারণ বেসিক ব্যাংক সম্ভবত আপত্তি জানিয়েছে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে। এই আপত্তি উঠলে তো তাহলে ভালো কথা হলো না। আবার শুনছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নাকি বলছে, সোনালী ব্যাংক এবং বিডিবিএলের পর অন্যরা ধীরে ধীরে একীভূত হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এই তর্ক বাজারে চালু আছে।’

একীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসলে ব্যাংকের সংকট সামনে আসেনি। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক করতেই পারে। প্রশ্ন হচ্ছে দুর্বলে দুর্বলে মিলে সবল হওয়া যায় না। সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল। বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এমন অভিযোগ নিয়ে একত্রিত হলে সমাধান মিলবে, তা বলা যাবে না।

Advertisement

তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন নির্দেশনা দিয়ে কী অর্জন করতে চাইছে? এই বিশ্লেষক বলেন, ‘একটি ভুল ধারণা দেশের মধ্যে চালু আছে। অনেকেই বলেন দেশের মধ্যে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। একাধিক ব্যাংক একীভূত হলেই ব্যাংকের সংখ্যা কমে যাবে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আমি একদম পরিষ্কার করে বলতে চাই, ব্যাংকের সংখ্যার চেয়ে ব্যাংকের শাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি ব্যাংকের পাঁচটি শাখাও থাকতে পারে আবার আরেকটি ব্যাংকের ৫শ শাখাও থাকতে পারে। মূলত, শাখা দিয়ে ব্যাংক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হয়।’

‘আমাদের দেশের একটি ব্যাংকের শাখা গড়ে ১৫ হাজার মানুষকে সেবা দেয়। আর ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় একটি ব্যাংকের শাখা ১২ হাজার মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেয়। তার মানে ব্যাংকের শাখা আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। একীভূত হলেই ব্যাংকের শাখা কমে যাবে তা নয়।’

প্রশ্ন হচ্ছে একীভূত না করেও দুর্বল ব্যাংককে সবল করার কোনো সুযোগ আছে কি না? অনেকগুলো দুর্বল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়নে নিয়ে সবল করা হয়েছে। যেমন রূপালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক। সেভাবেও সুযোগ ছিল সবল করার।’

‘একীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসলে ব্যাংকের সংকট সামনে আসেনি। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক করতেই পারে। প্রশ্ন হচ্ছে দুর্বলে দুর্বলে মিলে সবল হওয়া যায় না। সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল। বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এমন অভিযোগ নিয়ে একত্রিত হলে সমাধান মিলবে, তা বলা যাবে না। সংকট কোথায় তা খুঁজে সমাধানের পথ বের করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর সংকটের কথা কম-বেশি সবারই জানা।’

এএসএস/এএসএ/এএসএম