রোদের তীব্রতায় পুড়ছে দেশ। বিপর্যস্ত জনজীবন। হিটস্ট্রোকে মানুষ মারা যাওয়ার খবরও মিলছে। একটু স্বস্তির খোঁজে নানাজন নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। অনেককে আবার এ তাপ থেকে বাঁচতে বৃক্ষরোপণেরও উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এসময়ে বৃক্ষরোপণ ফলপ্রসূ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। তখন গাছ লাগালে টেকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমানের তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে গাছ লাগালেও হবে, তবে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তারপরও ১০ শতাংশের কম গাছ টেকার সম্ভাবনা থাকে। যাদের মধ্যে বৃক্ষরোপণের আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটি ধরে রেখে উপযুক্ত সময়ে কাজে লাগাতে হবে।
হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলগুলো ৫-১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এগুলো পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি। গরম আসতে পারে এসব বাস্তবতায় গাছ লাগানোর কাজটি আগেই করা উচিত ছিল।’— সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ৩৫ থেকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ১৯ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা হিট অ্যালার্ট। স্কুল-কলেজ-মাদরাসাও বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে হিটস্ট্রোকে কয়েকজন মারা গেছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
কালকিনিতে হিটস্ট্রোকে কৃষকের মৃত্যু গরমে কতিপয় সতর্কতা ও হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা নিয়ে যা জানালেন মন্ত্রী গরম বেড়ে ফের অতি তীব্র হতে পারে তাপপ্রবাহতীব্র তাপপ্রবাহের জন্য বনায়ন কমে যাওয়াকে দায়ী করে বৃক্ষরোপণে গুরুত্ব দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সারাদেশে ১০ দিনে পাঁচ লাখ বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছে। ২১ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কর্মসূচি বাস্তবায়নে শাখাগুলোকেও নির্দেশনা দিয়েছে সংগঠনটি। নির্দেশনা মোতাবেক লক্ষ্মীপুর, নেত্রকোনা, রাজশাহী জেলা, সিলেট জেলা, চাঁদপুর জেলাসহ বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা বৃক্ষরোপণ করেছেন।
গাছ লাগানোর জন্য এ সময়টি ঠিক কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাছ লাগানোর ঠিক-বেঠিক সময় বলে কিছু নেই। এখন যদি আপনি গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করেন, নিয়মিত পানি দেন, কদিন পর তো বর্ষাকাল আসবেই, গাছ বেঁচে যাবে। আমাদের দেশে অনেকে এমনকি বন বিভাগও গাছ লাগায়, পরিচর্যার অভাবে পরে এগুলো টেকে না। সেখানেই সমস্যা। এখন হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলগুলো ৫-১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এগুলো পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি। গরম আসতে পারে, দেশের বনভূমি বা সবুজ কমে যাচ্ছে— এসব বাস্তবতায় গাছ লাগানোর কাজটি আগেই করা উচিত ছিল।’
‘আসলে বৃক্ষরোপণ করলে শতভাগ বৃক্ষ কখনই টেকে না। যতটা টেকানো সম্ভব তার জন্য সর্বোচ্চ পরিচর্যা করার চেষ্টা করবো আমরা।’—শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান
Advertisement
পরিবেশবিদ এবং আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। তথা জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস। এ সময়ে বৃষ্টি থাকে, গাছ লাগালে টিকে যায়। এখন যারা হুজুগে মাতছে বৃক্ষরোপণের সময়ে কিন্তু তাদের পাওয়া যাবে না। তবে, তাপ থেকে বাঁচতে গাছ লাগাতে হবে, এ বোধটা ইতিবাচক। এটা উপযুক্ত সময়ে কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন
দূর হলো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ, গরম আরও বাড়ার আভাস চুয়াডাঙ্গা-যশোর-খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি রেকর্ডতিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণ নির্ভর করবে পানির প্রাপ্যতার ওপর। সে পানি প্রাকৃতিকভাবে আসতে পারে বা মানুষ নিজেও দিতে পারে। সাধারণত এ সময়ে গাছ লাগিয়ে কেউ প্রতিদিন পানি দিতে পারলে, সে গাছ টিকতে পারে। তবে সম্ভাবনা কম। শতকরা ১০টিরও কম টিকবে।’
বিষয়টি নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘কোনোভাবেই এপ্রিল-মে মাস গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময় নয়। গাছ লাগানোর সময় হলো জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ বর্ষাকালে গাছ লাগাতে হয়। এখন হয়তো ঘরের ভেতরে টবে গাছ লাগানো যাবে। কিন্তু বাইরে লাগাতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আসলে বৃক্ষরোপণ করলে শতভাগ বৃক্ষ কখনই টেকে না। যতটা টেকানো সম্ভব, তার জন্য সর্বোচ্চ পরিচর্যা করার চেষ্টা করবো আমরা।’
এসইউজে/এমএএইচ/এএসএম