নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার এক বছর আগে ২০১৩ সালে মরগ্যান স্ট্যানলি ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করে আর্থিকভাবে সমস্যায় থাকা দেশগুলোর সঙ্গে। যেমন: ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্ক। তখন এই দেশগুলোকে বলা হতো ভঙ্গুর পাঁচ। ভারতের দুর্বল ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে তিনটি সমস্যা তৈরি হয়। একটি হলো আর্থিক ও ব্যালেঞ্চ অব পেমেন্টে অস্থিতিশীলতা, ব্যবসার জন্য মূলধনের উচ্চ খরচ। তাছাড়াও ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নন-পারফর্মিং লোন।
Advertisement
সেখান থেকে দশ বছর পরে দেখা যায় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল। দেশটি বিদেশ থেকে মূলধন প্রবাহের ওপরও কম নির্ভরশীল। রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বড় রিজার্ভ, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও পর্যাপ্ত বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা।
২০১০ সালের দিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, যার প্রভাব পড়তে থাকে অন্যান্য ব্যাংকেও। ২০১৩ সালে ভারতের আগের সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন অধ্যাপক নিয়ে আসে। তিনি একটি সম্পদ মানের পর্যালোচনা শুরু করেছিলেন, যা দেশের টুইন-ব্যালেন্স-শীট সমস্যা, ব্যাংক ও করপোরেট উভয় ব্যালেন্স শীটের ওপর একটি অফিসিয়াল স্ট্যাম্প স্থাপন করে।
আরও পড়ুন>
Advertisement
২০১৬ সালে একটি নতুন দেউলিয়া কোড চালু করা হয়। ১০৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খারাপ ঋণ বাতিলের পাশাপাশি জোরপূর্বক আর্থিক একত্রীকরণ ও বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রাষ্ট্রচালিত ২৭টি ব্যাংককে একত্রিত করে ১২টি বানানো হয়।
পরিবর্তিত পদক্ষেপের কারণে ভারতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। নন-পারফর্মিং লোনের পরিমাণ ২০১৮ সালের ১৫ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশে নামে।
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের দিক থেকে বিশ্বের দশটি মূল্যবান ব্যাংকের মধ্যে এইচডিএফসি অন্যতম, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। এটি ইকুইটিতে ১৬ শতাংশ ফেরত দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মরগ্যানের এক্ষেত্রে অবদান ১২ শতাংশ ও ইউরোপীয় ব্যাংকের অবদান আট শতাংশের মতো।
দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো অবস্থানের কারণে বিভিন্নখাতে লোন দেওয়া সহজ হয়েছে। ২০১৫ সালের পর ভারতের বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ৬০ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৬৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ৭৮ হাজার। ফলে আর্থিক সুবিধা এখন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এখন মানুষ স্থানীয়দের কাছ থেকে উচ্চ হারে লোন না নিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে নিতে পারে।
Advertisement
দরিদ্র মানুষদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করা হয়। ২০১৪ সালের পর ৫০ কোটির বেশি মানুষ অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। এতে আর্থিকখাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু অ্যাকাউন্টগুলো ভারতের নতুন ডিজিটাল পেমেন্ট ও শনাক্তকরণ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত, ফলে সেগুলো মূল্যায়ন ও ক্রেডিট প্রদানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যবসায়িক সাফল্য ও ক্যাপিটাল সম্প্রসারণের কারণে ভারতের শেয়ারবাজারও রয়েছে শক্ত অবস্থানে। দশ বছর আগেও ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন ছিল স্পেনের চেয়েও কম। এখন তাদের সামনে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপান।
দীর্ঘ মেয়াদি বৃদ্ধির হারের ওপরভিত্তি করে পরামর্শ প্রতিষ্ঠান বিসিজি জানিয়েছে ২০৩৬ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। কোনো না কোনো ক্ষেত্রে জনসংখ্যার মালিকানাধীন শেয়ার ২০১৯ সালের পর ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশ হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনার অধীনে তহবিল সম্পদ ৬০০ শতাংশ বেড়েছে।
এমএসএম