জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্র থেকে খেলনার প্যাকেটে এলো কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে একটি পার্সেল আসে বাংলাদেশের ডাক বিভাগে। সন্দেহ হলে সেই পার্সেল খুলে দেখা যায় গাঁজার চকলেট ও কেক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে নিয়ে আসা হয় এসব মাদক। যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা।

Advertisement

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) জানায়, পার্সেল জব্দ করার পর, এর গায়ে থাকা একটি নম্বরের সূত্র ধরে এই চালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন মো. রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও মো. ইমরান ওরফে রাজ (২০)।

ডিএনসি জানায়, পার্সেলের ভেতরে ছিল ছয়টি প্যাকেট। যার মধ্যে ছিল টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। যার ওজন এক কেজি ৩০০ গ্রাম। পার্সেলে আরও ছিল আমেরিকার তৈরি গাঁজার নয়টি চকলেট ও ১০টি গাঁজার কেক।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী।

Advertisement

তিনি বলেন, রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক শাখায় ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে আসা একটি পার্সেল জব্দ করা হয়। যাতে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল যুক্ত কুশ, ক্যানাবিস চকলেট ও ক্যানাবিস কেক জব্দ করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, পার্সেলের গায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপকের অবস্থান নিশ্চিত হই। এরপর আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পার্সেলটি ডেলিভারি নেওয়ার কথা ছিল তার। রমজান মিয়া তাকে পার্সেল টাকার বিনিময়ে রিসিভ করার কথা বলেন। পরে রাসেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমজান মিয়াকে আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে রমজান মিয়া জানান, তাকে টাকার বিনিময়ে পার্সেলটি রিসিভ করতে বলেন মো. ইমরান ওরফে রাজ। পরে আশুলিয়ার আমতলা থেকে রাজকেও গ্রেফতার করা হয়। রমজান ও রাজ একে অপরের বন্ধু।

Advertisement

মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী আরও বলেন, যে প্যাকেটে করে মাদকগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছে, সেগুলো ছিল বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট। যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে এসব প্যাকেটে মাদক রয়েছে।

গ্রেফতাররা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বিদেশ থেকে গাঁজার কেক, কুশ ও চকলেট এনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন। বিদেশ থেকে যারা এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে এ মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটা বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে এটা অবৈধ জেনেই তারা বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে মাদক পাঠিয়েছে। এই পার্সেলটি যে কোনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পাঠিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়, ওইখানে বসবাসরত অন্য কোনো দেশের নাগরিকও পাঠাতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই মাদক বাংলাদেশে কতবার এসেছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঠিক কতবার এসেছে এ তথ্য এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আমরা গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, গত এক দুই বছর ধরে মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন তারা।

এসব মাদকের ব্যবহারকারী কারা জানতে চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, এটা আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করবো। এটা খুবই মারাত্মক।

গ্রেফতারদের বয়স অল্প। তারা এই কোটি টাকার মাদকের মূল্য কীভাবে সংগ্রহ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করবো তাদের অর্থের উৎস কি। এর সঙ্গে মানিলন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে। এসব বিষয়ে তদন্ত করা হবে।

টিটি/জেডএইচ/জেআইএম