ক্যাম্পাস

ইবির হলে র‍্যাগিং, জড়িতদের কঠোর শাস্তির সুপারিশ তদন্ত কমিটির

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে র‍্যাগিংয়ের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে দুই তদন্ত কমিটি। এতে তিন শিক্ষার্থীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি।

Advertisement

এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মুদাচ্ছির খান কাফি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সাগরের সম্পৃক্ততা বেশি ছিল। আর ইতিহাস বিভাগের উজ্জ্বল হোসেন কম জড়িত থাকায় তাকে সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তিনজনের জন্যই কঠোর শাস্তির সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অভিযুক্তরা সকলেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

Advertisement

হল কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযুক্তরা কেউ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হওয়ায় তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি তারা। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় হল প্রশাসন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইবির লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬নং কক্ষ) এক ছাত্রকে পরিচয়ের নামে বিবস্ত্র করে রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত র‍্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের উপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়। এ সময় ভুক্তভোগীকে বাবা-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন সিনিয়ররা। একপর‍্যায়ে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে পর্নগ্রাফি দেখিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করেন নির‍্যাতনকারীরা। এ সময় তাকে ‘নাকে খত’ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির‍্যাতন করেন অভিযুক্তরা।

এ সময় তাকে ভয় দেখিয়ে ৩-৪ বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। নির‍্যাতনের সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে শাসাতে থাকেন এবং ঘটনা বাইরে না জানাতে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেন।

এদিকে ওই কক্ষে প্রায়ই র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে বলে সাক্ষ্য দেওয়া শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির কাছে জানিয়েছেন। এছাড়াও হল প্রশাসেন কমিটির ৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত কমিটির ১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হল প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে। সেই কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে তারা প্রায় দুইমাস পর সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হলটির আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেন।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এ কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা। তিন সদস্যের এ কমিটির নির্দিষ্ট সময় ছিল না। তাদের যথাশীঘ্র প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।

হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন হল প্রভোস্ট বরাবর জমা দিয়েছি। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। বিধি অনুযায়ী শাস্তি দিতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছে।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, তিনজনের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করেছি।

প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, আমরা ঈদের আগেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আমরা জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসন বরাবর বিধি অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করেছি।

মুনজুরুল ইসলাম/এফএ/জিকেএস