দেশজুড়ে

দুই কোটি টাকার স্লুইস গেইট যখন কৃষকের গলার কাঁটা

নদনা খালে কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষকদের কল্যাণে স্লুইস গেইট স্থাপন করা হলেও এটি কোনো কাজেই আসছে না কৃষকের। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের ডাকাতিয়া নদীর শাখা নদনা খালের ওপর নির্মিত স্লুইস গেইটটি। বর্তমানে এটি অপসারণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

Advertisement

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে দক্ষিণ কুমিল্লা এবং উত্তর নোয়াখালীর পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের আওতায় ডাকাতিয়া নদীর নদনা খালের মুখে মনোহরগঞ্জের হাওরা এলাকায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেইটটি নির্মাণ করা হয়। এর এক বছর পরই স্লুইস গেইটটি অকেজো হয়ে পড়ে। অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এটির আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। পানি ধরে রাখতে না পারায় এটি এখন কৃষকের কোনো কাজেই আসছে না। বিশেষ করে ইরি-বোরো চাষের সেচ মৌসুমে পানি সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এছাড়া স্লুইস গেটটি অচল হয়ে পড়ে থাকায় একদিকে ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি ও দেশীয় মাছ খালে প্রবেশে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে খাল থেকে নদীতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কচুরিপানায় ভর্তি থাকে খালটি। স্লুইস গেটটি এলাকার কৃষি, নৌ-চলাচল, জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, কৃষকদের কল্যাণে নির্মিত স্লুইস গেইটটির কাজ শেষ হওয়ার পরের বছরই সেটি অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে এটি বর্ষাকালে মানুষের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে যন্ত্রণা দেয়। যেই উদ্দেশ্যে স্লুইস গেইটটি নির্মাণ করা হয়েছে সে কাজতো হয়ইনি বরং ফসলের ক্ষতি, নৌ-চলাচল বন্ধসহ নানান ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে কৃষকদের। খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে বর্ষার আগেই এটি অপসারণ করলে উপকৃত হবে কৃষক।

Advertisement

চড্ডা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, মনোহরগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক ইরি-বোরো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচের পানির চাহিদা পূরণ করতো। যার কারণে স্লুইস গেইটটির সঙ্গে শুরু থেকেই এখানকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য জড়িত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি গলার কাঁটা। কারণ নির্মাণের এক বছর পর থেকেই স্লুইস গেইটটি অকেজো হয়ে পড়ে। এই গেইট নির্মাণ কৃষকের তেমন কোনো উপকারে আসেনি। উল্টো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাওরা গ্রামের কৃষক আবদুল মোতালেব বলেন, এই খাল দিয়ে এক সময় লঞ্চও চলাচল করেছে বাইশগাঁও থেকে লাকসাম পর্যন্ত। কিন্তু এই স্লুইস গেইটটির কারণে এখন একটি নৌকাও চলতে পারে না এই খালে। বলতে গেলে মানুষের উপকারের বদলে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে গেইটটি। নির্মাণের পর বছর খানেক সচল থাকলেও গত ১৬ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর প্রয়োজনীয় নাট-বল্টু, লোহার পাত ও অন্যান্য জিনিসপত্রও চুরি হয়ে যাচ্ছে।

বাইশগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলছেন, বলতে গেলে স্লুইস গেইটটি বর্তমানে আমাদের গলার কাঁটা। এটি নির্মাণের পর কৃষকের দুর্ভোগের পাশাপাশি ডাকাতিয়া নদীর শাখা এ খালটিতে নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ যায়। খালে দেশি প্রজাতির মাছ এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। বছর দুয়েক আগে খালটি খননের ফলে বর্তমানে খালে আগের চেয়ে বেশি পানি থাকছে। যার কারণে ওই স্লুইস গেইটের এখন আর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। যত দ্রুত এটি অপসারণ করা যাবে কৃষকদের কল্যাণ হবে।

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেয়। কারণ চলতি মাসের ৩ তারিখে আমি যোগদান করেছি। তারপরও আমার সহকারীদের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করবো এবং কৃষকরা যেন লাভবান হন সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণেও সহায়তা করবো।

Advertisement

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারণে ওই স্লুইস গেইটটি মেরামত কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুতই স্লুইস গেইটটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এফএ/জিকেএস