জাতীয়

এবার গত বছরের গরম ছাড়িয়ে যেতে পারে

গত কয়েক বছর ধরে দেশে গরম বেড়েই চলছে। ভাঙছে তাপমাত্রার পুরোনো রেকর্ড। গত বছর এপ্রিলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর তখন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

Advertisement

এবারও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এপ্রিল। টানা ২৩ দিন ধরে বইছে তাপপ্রবাহ। এরই মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ঢাকায়ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পার হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা আর বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: 

Advertisement

তাপমাত্রা সামান্য কমে ফের বাড়তে পারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে

এরমধ্যে দেশের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে। কোথাও কোথাও বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে জনজীবনের দুর্ভোগ চরমে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গরম আরও বাড়লে যে কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, এবার গত বছরের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ও ২৫ এপ্রিলের দিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে সেটা বড় মাত্রার কোনো বৃষ্টি না। আগামী ২৭ ও ২৮ এপ্রিলের দিকে তাপমাত্রা ফের বাড়তে পারে।

কেন বেশি গরম- সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি কমে গেলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ বছর বৃষ্টিপাত কম। বৃষ্টি হাওয়ার জন্য এ সময়ে লাগে দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ু, যেখানে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এরসঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি নামে। কিন্তু দক্ষিণা বাতাস ও জলীয় বাষ্প আছে, তবে পশ্চিমা লঘুচাপ নেই। পশ্চিম দিক থেকে আসছে গরম বাতাস। তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে জলীয় বাষ্পটা ড্রাই আউট হয়ে যায়। তাই মেঘ সৃষ্টি হতে পারে না।’

আরও পড়ুন: 

Advertisement

পরিকল্পনা মাফিক নগরায়ন করা গেলে তাপমাত্রা কমতে পারে ৩-৪ ডিগ্রি

এবার পুরো গরমকালে তাপমাত্রা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এখন দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি আছে। অন্যদিকে রাতের তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। রাতে যতটুকু কমে যাওয়ার কথা সেটা কমছে না। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে রাতের তাপমাত্রা সাধারণত কমে না।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। ১৯ ও ২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আর সেসময় ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল ঢাকার তাপমাত্রা। গত বছর ৪ এপ্রিল থেকে টানা ১৯ দিন তাপপ্রবাহ ছিল দেশে।

এবার চলতি বছর ১৬ মার্চ প্রথম চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলার তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১৯ মার্চ তা আবার দূরও হয়ে যায়। পরে ৩১ মার্চ ফের রাজশাহী ও পাবনা জেলায় শুরু হয় তাপপ্রবাহ। সেই তাপপ্রবাহ এখন পর্যন্ত চলছে।

২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। ওইদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় এখনো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে। যদিও ঢাকায় কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ সময়ে গরম পড়ে, তবে এবার একটু বেশি। এবার শুরুটাই হলো বেশি দিয়ে, তাই মনে হচ্ছে গত বছরের তাপমাত্রা এবার ছড়িয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন হয়তো তাপমাত্রা একটু কমবে, এরপর আবার বেড়ে যাবে। বৃষ্টি না হওয়ায় সব মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। সাউথ-ওয়েস্টার্লি উইন্ড এখন নেই। সেজন্য মেঘ তৈরি হচ্ছে না। আগামী কিছুদিন খুব বেশি উন্নতি হবে না। দিন-রাতে এবং প্রতিদিন গরম থাকছে এটা সমস্যা হচ্ছে।’

‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াও পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এসময় কালবৈশাখী ঝড়ের সময়, কিন্তু হচ্ছে না। প্রতি বছর গরম বৃদ্ধির যে ধারা সেটি থাকবে। কারণ আমাদের এ অঞ্চলে অনেকগুলো জিনিস পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভবনের পর ভবন উঠতেছে, ক্ষেতগুলোতে বালুময় পলি পড়ে যাচ্ছে, যার জন্য পানি নিচে যেতে পারছে না। ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ হতে পারছে না। তাই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এগুলোর প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ার ওপর।’

শাহ আলম আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সারা পৃথিবী জুড়ে হচ্ছে। এর প্রভাব এ অঞ্চলেও পড়ছে। এখানে প্রভাব বেশি পড়ে কারণ জনসংখ্যা বেশি। আমাদের উত্তরে পাহাড় দক্ষিণে সাগর। পশ্চিম থেকে ভারতের গরম বাতাস আসছে। আমাদের পূর্বাঞ্চলেও পাহাড় আছে। গরম বাতাস এসে যেতে পারছে না। বাতাসটা যদি উত্তর-পশ্চিম দিকে যেতে পারতো তবেও কিছুটা স্বস্তি হতো।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরএমএম/জেডএইচ/এমএস