#নাবিকদের বরণ করবে মালিকপক্ষ, হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা#কয়লা খালাসে লাগবে পাঁচ দিন#মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরবে এমভি আবদুল্লাহ
Advertisement
জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করেছে। জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী বৈশ্বিক সংস্থা মেরিন ট্রফিক ও জাহাজের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড এ তথ্য জানিয়েছে।
মেরিন ট্রফিক ডটকম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে এমভি আবদুল্লাহ ওমান সাগর পাড়ি দিয়ে পারস্য উপসাগরে প্রবেশ করে। সকালে অতিক্রম করে হরমুজ প্রণালী। বাংলাদেশ সময় রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। পরে সেখানেই জাহাজটি নোঙর করে।
এমভি আবদুল্লাহর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করীম জানান, বাংলাদেশি জাহাজটি এখন আল হারামিয়া বন্দরে ব্রাভো অ্যাকাংরেজে অবস্থান করছে। জেটিতে ভেড়ার জন্য জাহাজটি এখন সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। রোববার রাত অথবা সোমবার সকাল নাগাদ অনুমতি মিলতে পারে।
Advertisement
ডকুমেন্টেশন ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সোমবার শুরু হবে জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কার্গো খালাসের কাজ। এতে অন্তত পাঁচদিন সময় লাগবে। তবে এর আগে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি ২৩ নাবিককে বরণে দুবাইয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে জাহাজের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড। এসময় নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি থাকবে সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটানোর সুযোগ। এস আর শিপিং লিমিটেডের একটি কারিগরি দল জাহাজের মেন্টেইনেন্সের সবকিছু খতিয়ে দেখবেন।
আরও পড়ুন
দুবাই বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছালো এমভি আবদুল্লাহ পারস্য উপসাগরে এমভি আবদুল্লাহকেএসআরএম গ্রুপের টেকনিকেল সুপারিনটেন্ড ফয়েজ মো. জুকভ জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি সবকিছু ঠিক আছে। কারণ, জলদস্যুরা আমাদের জিম্মিকালীন জাহাজটি রুটিন মেন্টেইনেন্সের সুযোগ দিয়েছে। তারপরও আমাদের একটি টিম সেসব দেখভালের জন্য আছেন।
এদিকে এস আর শিপিং লিমিটেড জানিয়েছে এরই মধ্যে দুবাই থেকে চট্টগ্রামের কার্গো চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নাবিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী দুজন বিমানে ও বাকি ২১ নাবিক কার্গো নিয়ে জাহাজেই দেশে ফিরবেন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এমভি আবদুল্লাহ দেশে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Advertisement
সিইও মেহেরুল করীম বলেন, কয়লা খালাসের পর আবার কার্গো লোড করে চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে। তবে ওই কার্গোটি এখনো ফাইনাল হয়নি, সম্ভবত হয়ে যাবে। কার্গো পেলে ২১ নাবিক জাহাজে ফিরবেন। যদি না পাই তাহলে বাকি নাবিকদেরও বিমানে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।
সোমালীয় দস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি জিম্মি করা হয়। এর ৩২ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা। এরপরই সেটি সোমালিয়া উপকূল থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জাহাজটি ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পরিবহন করছে।
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি জিম্মি করা হয়েছিল। এতে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন জাহাজের ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।
আরও পড়ুন
২৩ নাবিকের ভয়ংকর সেই দিনগুলো জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিক মুক্তনাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালীয় জলদস্যুরা। এর পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার জলসীমানা পার করে দেয়।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। তখন সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। সে বছরের ১৫ মার্চ জিম্মিরা দেশে ফেরেন।
এএজেড/এমকেআর/জিকেএস