দেশজুড়ে

গরমে চুয়াডাঙ্গায় শরবত বিক্রেতাদের পোয়াবারো

চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র তাপদাহ থেকে অতি তীব্র তাপদাহ। তারপরও জীবিকার তাগিদে মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। মরু অঞ্চলের মতো প্রখর তাপ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের জনজীবন। অসহ্য গরমে সামান্য প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে।

Advertisement

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার মোড়ে বসেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। তবে এই গরমে শরবত, জুস বা শরবত জাতীয় পানীয় বিক্রেতাদের পোয়াবারো অবস্থা। আগে যে বিক্রেতা দিনে ১ হাজার টাকার শরবত বিক্রি করতেন, তিনি এখন দিনে বিক্রি করছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার। যে বিক্রেতা দিনে দুইশো গ্লাস বিভিন্ন শরবত বা জুস বিক্রি করতেন, তার বিক্রি বেড়ে এখন এক-দেড় হাজার গ্লাসে পৌঁছেছে।

প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে এসব দোকানে সব বয়সের মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। লেবুর শরবত বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবু, ট্যাং, বিট লবণ মিশ্রিত লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে নানা দামে। এক টুকরো লেবুর রস, বিট লবণ, ট্যাং আর ঠান্ডা পানি মিশ্রিত এক গ্লাস লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। এছাড়া দুধের তৈরি মাঠার চাহিদাও তুঙ্গে এই গরমের দিনে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ জেলার উপজেলা শহরগুলোতে শরবত বিক্রির ধুম পড়েছে। ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের রসের তৈরি এসব শরবত কিনে পান করছেন ক্রেতারা।

চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার, কোর্ট মোড়, একাডেমীর মোড়, সরকারি কলেজ গেটসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। আগে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকানগুলোতে শরবত বিক্রি করতে দেখা গেলেও এখন দিনরাত চলছে বেচাকেনা। তৃষ্ণা নিবারণে শরবতের দোকানে ভিড় থাকছে সবসময়।

Advertisement

বড় বাজারে কাজ করা আশরাফুল আলম বলেন, তীব্র গরমে লেবুর শরবত শরীরে অন্যরকম আমেজ নিয়ে আসে। এক গ্লাস পান করলেই প্রশান্তি পাই।

চুয়াডাঙ্গা শহরের কাঁচাবাজারে বাজার-সদাই করতে আসা সানজিদা বলেন, এই গরমে অল্প কাজ করলেই অনেক পিপাসা লাগে। শরীর অনেক ঘেমে যায়। বাজারে এসেছিলাম, মনে হচ্ছে শরীর ঝলসে যাচ্ছে। তাই লেবু শরবত খেতে দোকানে এসেছি।

ভ্যানচালক কামাল উদ্দিন বলেন, তীব্র রোদের তাপে মানুষ বাইরে বেরোচ্ছে না। এই গরমে ভ্যান চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। এই শরবত খেতে অনেক ভালো লাগে, শরীরও ভালো থাকে।

বড় বাজারের ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা রুবেল শেখ বলেন, তীব্র গরমে লেবুর শরবতের চাহিদা আগের থেকে বেড়েছে। আগে আমার সারাদিন বিক্রি হতো দেড়শ থেকে দুইশ গ্লাস। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২শ গ্লাস। প্রচুর চাহিদা। আমি বসার সময় পাচ্ছি না, সবসময় ভিড় লেগেই আছে।

Advertisement

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সামনে মাঠা বিক্রি করা রায়হান মোল্লা বলেন, আগে সারাদিনে ৩০ লিটার মাল বিক্রি হতো। এখন ৮০ থেকে ৯০ লিটার বিক্রি হচ্ছে। আগে আমার সারাদিন বিক্রি হতো ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এখন তা বেড়ে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

চলমান দাবদাহে সকল শ্রেণির মানুষকে সতর্ক করে পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। আর যেকোনো ফলের শরবত পান গরম থেকে কিছুটা হলেও শরীরে প্রশান্তি দেবে। তবে গরমে হুটহাট ঠান্ডা শরবত বা পানি পান করার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানতে হবে।

এফএ/এমএস