বিনোদন

এই গান আমার নামডাই বদলাইয়া দিছে : কুদ্দুস বয়াতি

কুদ্দুস বয়াতি। লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ কর্তৃক নির্মিত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে পরিচিতি পান তিনি। এরপর অসংখ্য গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বেশ কিছুদিন কুদ্দুস বয়াতি ছিলেন আলোচনার বাইরে। তবে গেল ৯ এপ্রিল রাতে তার কণ্ঠে ‘আসো মামা হে’ শিরোনামের একটি হিপহপ গান ইউটিউবে মুক্তি পায়। নতুন করে এই গানটি তাকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে।সোমাবার দুপুরে লোকগানের এই কিংবদন্তি শিল্পী কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে। শিল্পীর বলা আঞ্চলিক ভাষা অপরিবর্তিত রেখেই আলাপের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-জাগো নিউজ : কেমন আছেন?বয়াতি : ভালা আছি। খুব ভালা আছি। জাগো নিউজ : আশাপাশে এত গাড়ীর শব্দ! কোথাও যাচ্ছেন নাকি?বয়াতি : হ। আমি অহন মিরপুর ১০ নাম্বার গোল চক্করের কাছাকাছি। বাসায় যাইতাছি। রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়ছি। কি বিষয়?বিস্তারিত শুনে বললেন, ‘ও আল্লা। সাংবাদিক ভাই। আমারে জাস্ট ৩০ মিনিট সময় দেইন। বাসাত গিয়া কথা কমুনে।’অতপর... ৩০ মিনিট পর........ জাগো নিউজ : পৌঁছালেন?বয়াতি : হ ভাইজান। কইন কি বিষয়?জাগো নিউজ : সংগীতের সবাই তো এখন আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘আসো মামা হে’ গানটি এখন সবার আলোচনার বিষয়। তা হঠাৎ এই পরিবর্তনের ভাবনা এলে কীভাবে?বয়াতি : গতমাসে আমি একটা কামে গেছিলাম রামপুরা টিভি সেন্টারে। হঠাৎ আমার নাম্বারে একটা অচেনা নাম্বার থেইক্যা ফোন আসে। আমি ফোনটা ধরলাম। তারপর ফোনের ওপাশ থেকে আমারে কইলো, মামা আমি প্রীতম। আমার বাবার নাম খালিদ হাসান মিলু। আগে গান গাইতেন। আমি ওনার ছোট ছেলে। খালিদ হাসান মিলুকে চিনতে পেরেছেন?`  সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দিলাম- ‘হ, চিনতাম না ক্যারে! তাইন মেলা বড় গায়ক। তা কও বাবা কি হইছে?’ তারপর সে আমারে তাদের বাসায় দাওয়াত করে। বলল বনশ্রী নাকি থাকে! আমারে বাসায় ঠিকানা দিল,  আমি গেলাম। হেরপর সে কত আপ্যায়ন শুরু করলো। তার মায়ে তো আমারে ভাই কইয়া ডাকতে শুরু করলো। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর প্রীতম আমারে কইলো, মামা তোমার একটা গান গাওন লাগব। লগে আমিও গাইব। গানটার সুর আমি করছি। এই গানটার মাধ্যমে তোমারে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাইতে চাই। তারপর আমি গানের কথা এবং সুর হুনলাম। পয়লাবারেই মনে ধরলো। এরপর আরো কয়েকবার শুনি। পেত্তেকবারেই ভালো লাগে। হেরপর গানটা করতে রাজি হই। প্রীতমের লাইগ্গাই আমার পরিবর্তন। ভিডিওর এই মডার্ন পোশাক সব তার চিন্তা ভাবনা। পোলা ছোট অইলে কী অইব, বুদ্ধি আছে, মেধা আছে। গানটাও গায় জবর। সবাই প্রীতমের লাইগ্যা দোয়া করবেন।জাগো নিউজ : তবে বলছেন আপনার এই নতুন জন্ম প্রীতমের হাত ধরেই?বয়াতি : এক্কেবারে পাকা কথা। জাগো নিউজ : প্রথমবার এমন রকিং হিপহপ গান করলেন। নতুন স্টাইলে গাইতে গিয়ে সমস্যা হয়নি?বয়াতি : একটু তো অইছিলই। ওই যে কইলাম প্রীতম খুব বুদ্ধিমান। ও দেখায়া বুঝায়া দিল। সহজ অইয়া গেল গা। পরে গানের রেকর্ডিংয়ের সময় খুব মজা পাইছি। প্রীতম ছাড়া এই গানের সঙ্গে যারা ছিলো তারা ভাবছিন আমি বুঝি পারতাম না। কিন্তু অহন তো পাইরাই গেলাম। গানডা খুব মজার। আমি বহুত মজা পাই শুইন্যা। ভিডিওটাও দেইখা ভালা লাগে। জাগো নিউজ : গানটি প্রকাশের পর থেকে সাড়া পাচ্ছেন কেমন?বয়াতি : যেহানেই যাই, সবাই বলতাছে হিপহপ বয়াতি। আনন্দ লাগে। যারা আমার যারা পরিচিত আছেন তারাও আমারে ফোন দিয়া গানডার জন্য প্রশংসা করতাছেন। আমার বড় পোলা ইলিয়াস কুদ্দুস ধানমন্ডির একটা ভার্সিটিতে পড়ে। হ্যায় একদিন কইল, আব্বা তোমার গানডা অহন হগ্গলের মুখেমুখে। বিভিন্ন জাগায় আড্ডা বসলে নাকি সবাই অ্যাই গানডাই হুনে আর গায়। তাছাড়া আমার এক নাতি আছে। ক্ল্যাশ নাইনে পড়ে সে আমারে মাইকেল কুদ্দুস কইয়া ডাক পারতাছে। আমি তো পড়ছি শরমে। এই গান আমার নামই বদলাইয়া দিল।  জাগো নিউজ : এমন হিপহপ গান আগামীতেও গাইবেন?বয়াতি : অবশ্যই। কয়দিন ধইরাই অনেকে আমারে এমন গান গাওনের জন্য বলতাছে। আমি কইতাছি, এক গান কইরাই ম্যালা পরিশ্রম অইছে। একটু জিরাইয়া (বিশ্রাম) লই। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন গান করবাম। জাগো নিউজ : আজকাল দিনগুলো কিভাবে কাটছে?বয়াতি : আমি অহন বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকি। মাঝেমধ্যে নেত্রকোনায় যাই। গান-বাজনা করি। বিভিন্ন মাজারে যাই। গান করি। এইতো...... জাগো নিউজ : আপনার পরিবারে কে কে আছেন?বয়াতি : আমার দুই ছেলে। একজন ভার্সিটিতে পড়ে। আরেকজন এবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিতাছে। আর মেয়ের জামাই থাহে লন্ডন। ভাই, বোন, স্ত্রীসহ এইহানে আমরা ১১ জনের পরিবার।জাগো নিউজ : আপনি তো দেশের বাইরেও অনেক কনর্সাট করেছেন। সেইসব অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?বয়াতি : এই ভালো মন্দ মিশাইয়া। এ পর্যন্ত বহু দেশে গান করছি। ভাবতেই ভালো লাগে। আমেরিকা গেছি ৬ বার, লন্ডন গেছি ১৩ বার, অস্ট্রেলিয়া গেছি ১৫-১৬ বার। এছাড়া বহু দ্যাশে গাইছি। সর্বশেষ কাতার গেছিলাম দুই বছর আগে। ওইখানে বাংলাদেশিরা খুব খাতির করেন, আদর করেন। বড় মায়া লাগে। জাগো নিউজ : আপনার ২৭ বছরের ক্যারিয়ার। খুব বেশি অ্যালবাম তো নেই আপনার সেই তুলনায়। কারণ কী?বয়াতি : আমি বয়াতি মানুষ। গান করি মানুষের ঘরে ঘরে যাইয়া। হের লাইগ্যাই অ্যালবাম করার তাগিদ কম। তাও দুইডা প্রকাশ করছিলাম। এইডা ১৫-২০ বছর আগের কতা। পয়লাডার নাম ‘সোনার নূপুর’, পরেরটা ছিল ‘আম খায়ো জাম খায়ো তেঁতুল খায়ো না’। আর অহন তো মানুষ ডিজিটাল হইছে, গান ইন্টারনেট থাইক্যা নামায় নেয়। হের লাইগ্যা আর অ্যালবাম প্রকাশ করিনা।জাগো নিউজ : প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসতেন। উনার সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। স্যারকে মিস করেন?বয়াতি : খুব। বহুত মনে পড়ে স্যারকে। তার লাইগাই আইজ আমারে সবাই চিনেছে। সে গ্রাম থেইক্যা আমারে তুইল্যা আনছে। ৯০ সালের পর হুমায়ূন স্যারের কল্যাণে প্রথমবারের মতো একটা বিজ্ঞাপনে গান গাই ‘এই দিন, দিন না আরো দিন আছে’ শিরোনামে। তারপর থাইক্যাই আমার কষ্ট শেষ হইছে। জীবনে ভাই ম্যালা কষ্ট করছি। না খায়া থাকছি। আল্লার অশেষ রহমতে হুমায়ূন স্যাররে মতো মাইনষের মন পাইছি আমি। দেশ-বিদেশে গান করি, কত নাম-সুনাম। সবই স্যারের উছিলায়। কিন্তু এহন আর কেউ আমারে ডাহে না। দ্যাশ ডিজিটাল হইতাছে। মানুষ শিক্ষিত হইতাছে। এহন যারা গান বাজনা করে তারা মনে করে অশিক্ষিত লোক দিয়া কোনো গান হইত না। আমরার গান কেউ শুনত না। কিন্ত আমি বলবার চাই, সুযোগ পাইলে অশিক্ষিতরাও অনেক কিছু করতে পারে। ‘আসো মামা হে’ কিন্তু সবাই শুনতাছে। হুমায়ূন স্যার আমার মতো বহুত মানুষরে সুযোগ দিছেন। তারে আল্লায় বেহেস্ত নসীব করুক। জানুইন? আইজ মনে হয় যদি স্যার থাকতাইন খুব খুশি অইতাইন মাইকেল কুদ্দুসরে দেইখ্যা। আফসোস!!!দেখুন কুদ্দুস বয়াতির গাওয়া ‘আসো মামা হে’ গানটি :

Advertisement

এলএ/পিআর