বিশ্বের একেক অঞ্চল বা দেশের মানুষের শারীরিক গঠন, আচরণ, রীতিনীতি, সংস্কৃতি একেবারেই আলাদা। জন্ম-মৃত্যু একই রকম হলেও এর পরবর্তি আচার-অনুষ্ঠানে আছে নানান বৈচিত্র্য। এই যেমন ধরুন আফ্রিকার এক উপজাতি আছে যারা প্রিয়জন কেউ মারা গেলে তার মৃতদেহ পুড়িয়ে স্যুপ বানিয়ে খেয়ে নেয়।
Advertisement
আবার আরেক জাতি আছে যারা মৃতদেহ মমি করে ঘরেই রেখে দেয়। কেউ আবার মৃতদেহ মাঠে ফেলে রাখে শকুনের খাওয়ার জন্য। তবে এক রহস্যময় স্থান রয়েছে যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মৃতদেহপূর্ণ কফিন। শুনতে যতটা ভয়ানক লাগছে, চোখে দেখলে আরও অস্বস্তি হবে।
বিশ্বেস ভীতিকর, রহস্যময় অথচ আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে এগুলো অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রায় ২০০০ বছর আগে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পাহাড় চুড়ায় মৃতদেহ ভরা কফিন ঝোলানোর রীতি ছিল। ঝুলন্ত কফিনের ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও বেশি পুরনো।
আরও পড়ুন
Advertisement
প্রায় ২০০ বছর ধরে কার মাথা সংরক্ষিত আছে জানেন?
মানুষের বিশ্বাস এই পদ্ধতিতে কফিনে রাখা মৃতদেহগুলো নাকি অনেক দিন সুরক্ষিত থাকে। বছরের পর বছর কেউ এগুলোর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ঝুলন্ত কফিন নিয়ে নানা বিশ্বাস রয়েছে। কথিত আছে, এক চীনা রাজবংশ এই প্রথার প্রবর্তন করে। সেই সময় বিশ্বাস করা হত যে, এরকম করলে সহজেই প্রকৃতিতে ফিরে আসা যায় এবং দ্রুত স্বর্গ লাভ করা যায়।
তবে এসব কফিন নিয়ে নানান ভয়ানক কাহিনিও প্রচলিত আছে। আজও ওই সব কফিনের কাছে যেতে লোকজন ভয় পান। একবার ভেবে দেখুন, পাহাড় থেকে হাজার হাজার কফিন ঝুলতে দেখলে মনে শঙ্কা তো জাগবেই। তার উপর যদি জানা যায় সেই কফিনের ভিতরে সত্যি সত্যিই লাশ রয়েছে।
কথিত আছে, প্রাথমিকভাবে যখন লাশের কফিন পাহাড়ে ঝোলানো হতো, তখন মানুষ তার চারপাশে ঘোরাঘুরি করার সাহসও পেত না। অনেকের বিশ্বাস, অন্ধকারে প্রেতাত্মারা এই কফিনের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। তাই আজও সূর্যাস্তের পর কেউ কফিনের কাছে যেতে সাহস পান না। মাঝরাতে এখান থেকে নাকি অদ্ভুত সব আওয়াজ আসে। কেউ কেউ এমনও বিশ্বাস করেন যে কফিন থেকে মৃতদেহ বেরিয়ে আসে এবং রাতে নাচতে শুরু করে। তাই এসব স্থান ভুতুড়ে।
Advertisement
কোনো বিশেষ একটি দেশের নয়, বরং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশের ঐতিহ্য। চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে বহু বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। যদিও এই রীতির পেছনে মানুষের নিজস্ব কিছু বিশ্বাস রয়েছে।
চীনচীনের ইয়াংজি নদীর তীরে আজও কফিন রাখা আছে। কথিত আছে, মিং রাজবংশের আমলে এখানে বো সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতেন। এক সময় এখানে এক হাজারের বেশি কফিন ছিল। যদিও বয়সের বারে সেগুলো নষ্ট হয়েছে। অবশিষ্ট কফিন বর্তমানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই স্থানটি চীনের একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র।
ফিলিপিন্সফিলিপিন্সের সাগাদায় ঝুলন্ত কফিন দেখা যায়। কফিনে ভরা এই জায়গাটি দেখতে কিন্তু বেশ ভয়নাকই লাগে। এখানে এই প্রথা আজও অনুসরণ করা হয়। জানলে অবাক হবেন যে, এখানকার প্রবীণরা তাদের মৃত্যুর আগেই নিজস্ব কফিন প্রস্তুত করে রাখেন। তারা নিজেরা না পারলে, তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের জন্য একটি কফিন তৈরি করে রাখেন।
ইন্দোনেশিয়াইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসিতে পাহাড়ের চূড়ায় অনেক কফিন ঝুলতে দেখা যায়। সেগুলো এত উঁচুতে কীভাবে তোলা হত তা আজও কেউ বুঝতে পারে না।
আরও পড়ুন
মহাকাশ থেকে দেখা যায় পৃথিবীর যেসব স্থানএখনো গুহায় বাস করে এখানকার মানুষ কেএসকে/এমএস