ইরানের হামলার জবাব দিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তেহরানের ওই হামলার জবাব দেওয়া হবে এমনটা আগেই স্পষ্ট করেছিল তেল আবিব। পুরো সপ্তাহজুড়েই ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছিল যেন ইরানি হামলার জবাবে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালানো না হয়।
Advertisement
যদিও ইরানের হামলা রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো এ ধরনের হামলা চালিয়েছে তেহরান। কিন্তু সেটাও আসলে ছিল একটা প্রতিশোধ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
ওই হামলায় দুই শীর্ষ সামরিক কমান্ডারসহ ১৩ জন নিহত হন। এর প্রতিশোধ নিতেই গত শনিবার ইসরায়েলে আক্রমণ করে ইরান। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়। এরপর থেকেই ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরানের ইসফাহান বিমানবন্দরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে কী কারণে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
Advertisement
এখন পরিস্থিতি কোনদিকে গড়াবে সেটা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। ইসরায়েলের হামলা এখানেই শেষ কিনা এবং ইরান পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নেবে কিনা। তবে ইরানের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইবারস্পেস’-এর পক্ষ থেকে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ইসফাহান বা দেশের অন্য কোনো জায়গায় সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) পাঠানোর ব্যর্থ ও বিব্রতকর একটি প্রয়াস চালিয়েছে এবং সেসব ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও একই ধরনের রিপোর্ট করেছে। তারা জানিয়েছে, দেশের ভেতরের একাধিক অঞ্চলে ডিফেন্স সিস্টেম কার্যকর করা হলেও কোনো সংঘাত বা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ইসফাহান শহরের একটি সেনাঘাঁটির কাছাকাছি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের একটু পরেই ইসফাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। আর এর ফলে ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।
Advertisement
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরের ফ্লাইট পুনরায় চালু করা হয়েছে। দেশটির বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জনিয়েছে, তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবার ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে।
এর ইরানের কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইসফাহানে বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কয়েকটি মিনি ড্রোনকে প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্রিয় হওয়ার ফলেই দেশটির বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে। খবরে বলা হচ্ছে, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু অজ্ঞাত মিনি ড্রোনকে প্রতিহত করেছে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্র বলা হয় ইসফাহান শহরকে। রয়টার্স জানিয়েছে যে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচিত নাতাঞ্জসহ ইসফাহান প্রদেশে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক সাইট রয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইসফাহান ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল। প্রশিক্ষণ, গবেষণা থেকে শুরু করে দেশটির পারমাণবিক সামর্থ্য বাড়ানোর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখানে।
সুতরাং এটি ইসরায়েলের হামলার একটি সম্ভাব্য জায়গা। কারণ ইসরায়েলিদের সবচেয়ে বড় ভয় ইরানের বর্তমানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়, ভবিষ্যতে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কা।
আরও পড়ুন:
এবার ইরানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানসহ যে কয়টি দেশ থেকে হামলা চালানো হয় ইসরায়েলে কুয়েত-কাতারের মার্কিন ঘাঁটি থেকে ইরানের ওপর হামলা নিষিদ্ধ ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্রএদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরআইবি ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসফাহানের পারমাণবিক কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’ রয়েছে।
টিটিএন