ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
Advertisement
গত ১৬ এপ্রিল অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) মো. তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভালুয়েশান উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির হোসেনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক এবং ইএমআইএস সেলের খন্দকার আজিজুর রহমানকে সদস্য করা হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখনো অফিশিয়ালি চিঠি পাইনি। তবে চিঠি পাওয়ার পর কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে তদন্তের জন্য চট্টগ্রামে আসবো।'
Advertisement
এর আগে গত ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) মো. তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরের জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। তবে যদি সত্যিকার অর্থে অভিযোগের তদন্ত করতে হয়, তাহলে তাকে পদ থেকে আপাতত সরিয়ে তদন্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় নির্ধারিত নম্বরের চেয়েও বেশি নম্বর পায়। তাছাড়া দুপুরে ফল প্রকাশের পরপর ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বর ফর্দ সন্ধ্যায় পাল্টে যায়। ওই বছর চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়া এক শিক্ষার্থীর নম্বরে দেখা যায়, পদার্থ বিজ্ঞানে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর লেখা রয়েছে ২১৮! একই ঘটনা ঘটেছে ওই শিক্ষার্থীর উচ্চতর গণিতের বিষয়েও। আরও একাধিক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে এমন অস্বাভাবিক নম্বর দেখা যায়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের ক্ষেত্রে এমন নম্বর পাল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করা হয়।
Advertisement
একইভাবে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে ওই সময়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফলাফল নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়নের জন্য তৃতীয় পক্ষের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়। তবে এ ঘটনায় গতবছরের ৪ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ।
এমডিআইএইচ/এসআইটি/জিকেএস