দক্ষিণ এশিয়ার দেশীয় জাত (জেবু ক্যাটেল) ও হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর সংকরায়নের ফলে জন্ম নেওয়া গাভির দুধ পান করলে মানবদেহে প্রায় সাত ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গবেষণা করে বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঞা।
Advertisement
অধ্যাপক সামছুল আলম জানান, দেশীয়-হলস্টেইন সংকর জাতের গাভিগুলোর দুধ নিয়মিত পান করলে মানবদেহে ডায়াবেটিস, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ (আইএইচডি), রক্ত পরিবহনকারী ধমনি পুরু হওয়া, সিজোফ্রেনিয়া, অটিজম ও বদহজমের মতো প্রায় সাত ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে উপযুক্ত বা ভালো জিনোটাইপের ষাঁড় দিয়ে গাভির প্রজনন করালে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে জানান এ গবেষক।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৩৩টি দেশীয়-হলস্টেইন সংকর ও ১২৫টি দেশীয় জাতের গরুর রক্তের নমুনা বা লেজের চুল নিয়ে অ্যালিল স্পেসিফিক-পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশনের (এএস-পিসিআর) মাধ্যমে গবেষণাটি সম্পন্ন করেন অধ্যাপক সামছুল আলম ও তার গবেষক দল।
Advertisement
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের বিষয়ে এ অধ্যাপক বলেন, পিসিআর পদ্ধতির মাধ্যমে গবাদিপশুর ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দেশীয় জাতের গরুতে রোগ সৃষ্টিকারী জিনোটাইপ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তবে সংকর জাতের গরুগুলোতে তা বেড়ে ১৪ শতাংশে উপনীত হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক সামছুল আলম বলেন, বিটা-কেসিন দুধের প্রোটিন জাতীয় একটি উপাদান। এ১ ও এ২ বিটা-কেসিনের দুটি ধরন। দেশীয় জাতের গরুগুলো এ২এ২ ও এ১এ২ জিনোটাইপের। অন্যদিকে দেশীয়-হলস্টেইন সংকর গরুগুলো এ১এ১ জিনোটাইপের। এ২এ২ ও এ১এ২ জিনোটাইপ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী না হলেও এ১এ১ জিনোটাইপের জন্য মানবদেহে ওপরের রোগগুলো সৃষ্টি হয়।
রোগ সৃষ্টির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশীয় গরুসহ পৃথিবীর সব জাতের গরুর ৬৭ নম্বর অ্যামিনো এসিড ছিল প্রোলিন (এ২)। হলস্টেইন জাতের গরুর জিনে মিউটেশন হয়ে প্রোলিন অ্যামিনো এসিডের পরিবর্তে হিস্টিডিন তৈরি হয়েছে। মানুষের শরীরের গ্যাস্ট্রিক জুস বা পাচক রস তৈরির জন্য দায়ী গ্যাস্ট্রিক এনজাইম হিস্টিডিনের উপস্থিতিতে ৬৭ নম্বর অ্যামিনো অ্যাসিডকে ভেঙে ছোট ছোট খণ্ডে পরিণত করে। এ হিস্টিডিনের কারণে সাতটি অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে তৈরি হয় সেভেন বিটা ক্যাসোমোরফিন (এ১)। হলস্টেইন জাতেই এ মিউটেশনের প্রথম উদ্ভব হয়।
সাধারণত একটি দেশীয়-হলস্টেইন সংকর জাতের গাভি থেকে দৈনিক ২৫-৩০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। দুধ উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এ জাতের গাভি পালনে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষকরা দেশীয়-হলস্টেইন সংকর জাত পালনে আগ্রহী হওয়ায় বাজারের বেশিরভাগ দুধই এ১এ১ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
জনস্বার্থে এ সমস্যা দ্রুত নিরূপণ ও সমাধান হিসেবে অধ্যাপক সামছুল আলম বলেন, গাভিকে এ২এ২ বা এ১এ২ জিনোটাইপের ষাঁড়ের মাধ্যমে প্রজনন করালে ক্ষতিকর দুধ উৎপাদনকারী এ১এ১ জিনোটাইপের বাছুর তৈরি হবে না। এ২এ২ বা এ১এ২ জিনোটাইপের ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করালে উন্নতমানের এ২এ২ জিনোটাইপের বাছুর না পাওয়া গেলেও কমপক্ষে এ১এ২ জিনোটাইপের বাছুর পাওয়া যাবে। রোগ সৃষ্টি না হওয়ায় উন্নতমানের দুধ হিসেবে এ২এ২ জিনোটাইপের গরুর দুধের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে এ১এ২ জিনোটাইপের গরুর দুধ উন্নতমানের না হলেও অন্তত রোগ তৈরি হয় না।
সারাদেশে নিরাপদ দুধ উৎপাদন নিশ্চিতকরণে কৃষকদের স্বল্পমূল্যে এ২এ২ বা এ২এ১ জিনোটাইপের ষাঁড় নির্ণয় করতে সহযোগিতা করবেন বলেও জানান অধ্যাপক সামছুল আলম।
এসআর/জেআইএম