আইন-আদালত

সুনামগঞ্জের মুকিতসহ ১১ জনের আইও’র সাক্ষ্য শেষ, যুক্তিতর্ক ১৭ মে

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মুকিত মনিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরার কার্যক্রম শেষ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মামলায় সামিংআপ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১৭ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।

Advertisement

বুধবার (১৭ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ও বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামিদের পক্ষের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন।

রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে বলেন, আসামিদের মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। আর পাঁচজন দেশে-বিদেশে পলাতক। গ্রেফতার এক আসামি জোবায়ের মনিরসহ ৩ জন জামিনে রয়েছেন। বাকি তিন জন কারাগারে।

Advertisement

আইনজীবী জানান, মামলার ১১ আসামির মধ্যে মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন মনির, মো. জাকির হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. তোতা মিয়া টেইলার সুনামগঞ্জের শাল্লার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া মো. আব্দুল জলিল ও মো. আব্দুর রশিদ একই জেলার দিরাই থানার বাসিন্দা। বর্তমানে তারা সবাই গ্রেফতার রয়েছেন।

রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, মামলায় ১১ আসামির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) জমা দেন। পরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ মে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর আগে অভিযোগ গঠন করে একই বছরের ২২ জুন এ মামলায় সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা ১২ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা(আইও) জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান, ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।

Advertisement

ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল থেকে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যান মুকিত মনির।

আসামিদের মধ্যে মনির, সিদ্দিকুর, তোতা মিয়া ও রশিদ বিএনপির সমর্থক। জাকির শাল্লা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং জলিল এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক।

২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার তথ্য দিয়ে জোবায়ের মনির জামিন মঞ্জুর করিয়ে নেন।

আইনজীবী জানান, অপরাধী হিসেবে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জনের অপরাধের অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি। এর মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার হয়েছে। জোবায়ের মনির অসুস্থতার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এর পরে বাকি আরও দুই আসামি জমিন নেন।

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বরে হাওরাঞ্চলের শীর্ষ রাজাকার আব্দুল খালেকের নির্দেশে পেরুয়া, উজানগাঁও, শ্যামারচরে ভয়াবহ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়।

শ্যামারচর বাজারের স্কুলের সামনে ২৭ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লোকজনকে লাইন ধরিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। পরে কয়েকটি পল্লিতে প্রায় তিন শতাধিক প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী দিয়ে নারীদের ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে।

ওই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন আব্দুল খালেকের ভাই মুকিত মনির, কদর আলী, ছেলে প্রদীপ মনির, জোবায়ের মনিরসহ প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী। ১৯৭২ সালে কদর আলীকে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় ৩৪ জনকে হত্যা, পাঁচ নারীকে ধর্ষণ, ৩০টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ৩১ জনকে অপহরণ ও ১৪ জনকে নির্যাতনের চারটি অভিযোগ আনা হয়।

মামলার ১১ আসামির মধ্যে মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন মনির, মো. জাকির হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. তোতা মিয়া টেইলার সুনামগঞ্জের শাল্লার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া মো. আব্দুল জলিল ও মো. আব্দুর রশিদ একই জেলার দিরাই থানার বাসিন্দা। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম