জাতীয়

সিজারিয়ান প্রসবে বিধিনিষেধ আরোপ চায় মানবাধিকার কমিশন

সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে গর্ভবতী নারীকে বের করে দেওয়ার ঘটনা সামনে আসার পর এমন প্রয়োজনীয়তার কথা জানায় কমিশন।

Advertisement

বুধবার (১৭ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানায়, গত ১৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গর্ভবতী মাকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে বের করে দিলেন গাইনি চিকিৎসক’ শিরোনামে প্রতিবেদন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কমিশন জানায়, রাজধানীর শ্যামপুর থেকে এক গর্ভবতী নারী মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। রীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক আছে মর্মে স্বাস্থ্যকর্মী জানান। দায়িত্বরত চিকিৎসক তার আর্থিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করেন এবং সিজার করতেই হবে বলে জানান। কিন্তু গর্ভবর্তী নারী পূর্বে দুটি সন্তান স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উল্লেখ করেন এবং সিজার করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে ওই চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর ওপর নানান মানসিক চাপ তৈরি করেন। চিকিৎসক আপত্তিকর মন্তব্যসহ হয়রানিমূলক কথা বলেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই নারীর আরেক সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়।

কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর ৩১তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের এক অধিবেশনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার যেন সুনামির মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অস্ত্রোপচার বাড়ছে। দুটি শিশু জন্মের একটি হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। এতে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্য ব্যয়।

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মর্মে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া শিশু জম্মে অস্ত্রোপচার করা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরূপ।

এতে আরও বলা হয়, যেখানে স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ভর্তুকি প্রদান করতে হয়, সেখানে মিটফোর্ডের মতো একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চিকিৎসক কর্তৃক সিজার করতে চাপ প্রয়োগ করার বিষয়টি কমিশনের বোধগম্য নয়। এ ধরনের সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রকৃত কারণ কী তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।

এ অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত করতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পরিচালককে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রসবে অপ্রয়োজনীয় সিজার/সি-সেকশন বন্ধ, এ লক্ষ্যে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে বলা হয়েছে।

এসএম/কেএসআর/জিকেএস

Advertisement