নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে প্রার্থী ও তার দুই ভাইকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এরই মধ্যে অপহৃত তিনজনকে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে প্রথমে সিংড়া এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Advertisement
পুলিশ জানিয়েছে, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী দেলোয়ার হোসেন। সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে তিনিসহ তার দুই ভাই অপহরণের শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার জন্য ভুক্তভোগীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলকে দায়ী করেছেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, ঘটনাটি জানার পরই পুলিশ কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে অপহরণকারীদের ধরতে ও অপহৃতদের উদ্ধার করতে অভিযানে নামে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেরে অপহৃতদের কলম বাজারে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবীব রুবেল। গত রোববার পর্যন্ত তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেননি। তবে সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে যান। এসময় তার দুই বড় ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দিতে বের হন।
Advertisement
পরে আলাউদ্দিন ও এমদাদুল কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে আসা কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক ওই মাইক্রোবাসে করে তাদের তুলে নিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের সন্ধান না পেয়ে দেলোয়ার হোসেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল করে ঘটনাটি জানান।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম মোবাইল ফোনে জাগো নিউজের এ জেলা প্রতিনিধিকে জানান, নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে তিনি মাইক্রোবাসে করে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি তার ফোনে অপহৃতদের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন।
এসময় আলাউদ্দিন মুন্সি জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম তাদের নাটোর থেকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছেন। তারা তার সঙ্গে আছেন। তবে এখনো তাদের উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এর কিছুক্ষণ পর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে দেলোয়ার হোসেন এ প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার অন্য ভাইকে নিয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। বিকেল ৪টার কিছু পরই একটি মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা সেখানে যান। এসময় তারা প্রার্থী দেলায়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকেও মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান।
Advertisement
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। তবে এ বিষয়ে জানতে মোহন আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোনকল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, অভিযান চালিয়ে কলম বাজার থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে এমদাদুল হক গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল নাটোর হওয়ায় সিংড়া থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের নাটোর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপি তারিকুল ইসলাম।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জাগো নিউজকে জানান, তিনি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রেজাউল করিম রেজা/এমকেআর/জিকেএস