দেশজুড়ে

ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-পিকআপে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি কাটিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে ও পিকআপে করে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। গণপরিবহন সংকট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া ও টিকিট না পাওয়াসহ পথের ভোগান্তি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

বগুড়ায় কাউন্টারগুলোতে ঈদ পরবর্তী বাসভাড়ার তালিকা সাঁটিয়ে ঢাকা রুটে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। পরিবহন মালিক সমিতি থেকে ঢাকার ভাড়া নির্ধারণ করা আছে নন-এসিতে ৫৫০ টাকা। নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই টিকিট বিক্রি করলেও অভিযোগ আছে কাউন্টারে টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ৩০০-৪০০ টাকা দিলে তবেই মিলছে টিকিট। আবার যারা ভালো কোম্পানির বাসের টিকিট পাচ্ছেন না তাদের বাড়তি টাকা দিয়ে ভরসা রাখতে হচ্ছে লোকাল বাসের ওপর। সেখানে জনপ্রতি টিকিটের জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।

এসি বাসের ক্ষেত্রবিশেষে ৪০০-৭০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৮০০ টাকার টিকিট এক হাজার ২০০ ও হুন্দাই এসির টিকিট ৫০০ টাকা বেশিতে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাহাবুবার রহমান মিজান নামের এক যাত্রী শ্যামলী পরিবহনে নন-এসির সাড়ে ৫০০ টাকার টিকিট কিনেছেন এক হাজার টাকায়। সিট ম্যানেজ করতে কাউন্টারে দায়িত্বরদের দিতে হয়েছে সাড়ে ৪০০ টাকা। এমনকি এ যাত্রীকে কোনো টিকিটও দেওয়া হয়নি।

Advertisement

আদিত্য আহসান নামের আরেক যাত্রীকে ৫৫০ টাকার টিকিট কিনতে হয়েছে ৮০০ টাকায়। অবশ্য তার টিকিটের গায়ে মূল্য সাড়ে ৫০০ টাকাই লেখা ছিল।

ঠনঠনিয়া বাস কাউন্টারে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক কোরবান আলী বলেন, নন-এসি বাসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সাড়ে ৫০০ টাকাই নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে ঈদে যানযটসহ নানারকম চাপ থাকায় এসি ও হুন্দাইয়ের টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে।

হাসান এক্সপ্রেস নামের একটি বাসের সহকারী রুবেল হাসান বলেন, ঈদে ঢাকামুখী বাসের সংকট আছে। যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকায় ভাড়া হিসেবে জনপ্রতি ৮০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। গাড়িতে উঠে কমবেশি করে ভাড়া নেওয়া হবে। এছাড়াও ঈদযাত্রার ধীরগতি আর যানজটের জন্য এসি বাসের খরচ বাড়তি হয়, তাই টিকিটের মূল্যও বেশি।

বাসের অতিরিক্ত ভাড়া ও টিকিট না পাওয়ায় ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঢাকায় ফিরছে নিম্নআয়ের মানুষ। ফলে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মাটিডালি ও বনানী মোড়ে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বাড়ছে।

Advertisement

মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকলেও বেলা ও রোদের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। গাড়ির চাপ বাড়লেও স্বাভাবিক রয়েছে এ মহাসড়ক। তবে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি তীব্র গরম উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপে করে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। ট্রাক ও পিকআপে করে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য গুনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

শহরের ছিলিমপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে ট্রাকে করে ঢাকায় ফেরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি। তাদের কেউ নরসিংদী শহরে আবার কেউ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিভিন্ন কারখানায় চাকরি করেন। ট্রাকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা জয়পুরহাট জেলার গোপীনাথপুরের বাসিন্দা সুমন শেখ বলেন, খাদ্য প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানে ১৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। ঈদ আর বৈশাখ উদযাপনে বাড়ি এসেছিলাম। ভালো কোনো বাসে টিকিট নেই। লোকাল বাসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।

মাটিডালি মোড়ে কথা হয় ট্রাকে করে ঢাকায় যাচ্ছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে। তার মধ্যে আজমিরা জাহান নামে এক নারী বলেন, ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। বেশি ভাড়া দিয়ে বাসে করে যাওয়া-আসা সম্ভব না। তাই কম খরচে ট্রাকে করে বাড়ি এসেছিলাম আবার ফিরছিও ট্রাকে করে। তবে যেভাবে কাঠফাটা রোদ উঠেছে এতে করে তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়াটাও স্বাভাবিক।

ঢাকাগামী ট্রাকযাত্রী আব্দুস সালাম বলেন, আমরা সামান্য বেতনের চাকরি করি। বাসে ভাড়া বেশি তাই কষ্ট করে ট্রাকে কর্মস্থলে ফিরছি। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। ফিরেও যেতে হচ্ছে ভোগান্তি নিয়ে। মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি এবং যানজট না থাকলেও রোদে তীব্র গরম সহ্য করে ট্রাকে করেই ঢাকা ফিরছি।

বনানী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শতশত মানুষ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ঢাকাগামী কোনো বাসেই সিট পাচ্ছেন না তারা। এছাড়াও নামবিহীন কিছু বাসে সিট থাকলেও টিকিট বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ দামে। এজন্য নিম্ন আর মধ্যআয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা ট্রাক ও পিকআপ।

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রিফাত হাসান বলেন, মাত্র ৩০০ টাকায় পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছাতে পারবো। অসহনীয় গরম হলেও করার কিছু নেই। বাসে ৬০০ থেকে হাজার টাকার ভাড়া দিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।

ট্রাকচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বড় চাকার প্রতি ট্রাকে ৪০-৪৫ জন যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। পিকআপে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ জন। প্রতিজনের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। তাদের গাবতলীতে নামিয়ে দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা হলেও নিম্নবিত্ত মানুষের একমাত্র অবলম্বন এ ট্রাকযাত্রা বলে উল্লেখ করেন দেলোয়ার।

শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আবুল ফয়সাল বলেন, ফিরতি ঈদযাত্রায় এখনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তবে যানবাহনের চাপ আছে। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পথেই নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার চারটি ট্রাক ও পিকআপের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

আরএইচ/এমএস