চালের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে রোববার পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে চালের বস্তায় ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপাদনের তারিখ লেখার নির্দেশনা কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখনও প্রস্তুত নন চালকল মালিকরা (মিলার)।
Advertisement
মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মিল মালিকরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাদের কিছু যন্ত্রপাতি লাগবে। সেটি সংগ্রহ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এছাড়া বস্তায় ধানের জাত লেখা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ বিষয়টিও সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চালের বস্তায় বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করতে মিল মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়েছে। দু-মাস আগে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এরপরও তাদের প্রস্তুত না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।
আরও পড়ুন
Advertisement
সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তদারকির মধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলেও জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলা থেকে এ বিষয়ে (বস্তায় বিভিন্ন তথ্য দেওয়া) মিলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু, এটা একটু জটিল বিষয়। বস্তায় উৎপাদনের তারিখ, জাত, দাম। দামের মধ্যে তো পার্থক্য থাকে। কিছু বিষয় আছে ফিক্সড না, প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করাও মুশকিল। সরকার যেহেতু আইন করেছে মিল মালিকরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে।’
রোববার থেকেই বস্তায় ধানের জাত, দামসহ বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও নতুন কোনো ধান আসেনি। টুকটাক কাটাকাটি হয়েছে। এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। আমাদের কিছু মেশিনপত্র লাগবে। আমাদের যে ডাইস আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের ধারণাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোজা ও ঈদে বন্ধ থাকায় সেটা করতে পারিনি। একটা বিষয় বাস্তবায়ন করতে গেলে সময় লাগবে। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন
মিনিকেট নামে চাল বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদেরধানের জাত লেখার বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে জানিয়ে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সরকার এখনও ধানের জাতগুলো পুরোপুরি চিহ্নিত করতে পারেনি। মিনিকেটের ধানের চাল তো আবাদ হচ্ছে। এ ধানের বীজ তো কৃষকের কাছে আছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট যে ধান আবাদ করে না, সেগুলোর নাম লেখা যাবে না। কিন্তু কৃষকের কাছে তো এ ধরনের জাত রয়েছে। সেক্ষেত্র ওই জাতের ধানের ক্ষেত্রে আমরা কী লিখব? এ বিষয়ে জটিলতা আছে।’
Advertisement
‘সরকার আমাদের ধানের জাতের কোনো তালিকা দেয়নি। সেটা দিলে সুবিধা হবে।’ বলেন চালকল মালিক সমিতির সভাপতি।
বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য লেখা কোনো চালের বস্তা আমাদের কাছে আসেনি। আমরা চাল উৎপাদন করি না। আমরা মিলারদের কাছে থেকে চাল আনি। এটা নতুন একটা বিষয়, এটা বাস্তাবায়ন করতে সময় লাগবে বলে মনে হয়।’
নির্দেশনা কার্যকর ঘোষণা হলেও মিল মালিকরা এখনও প্রস্তুত নয়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের ৬৪ জেলায় মিল মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকরা মিটিং করেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা মিটিং করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবও মিল মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। তারা এখনও প্রস্তুত হতে পারেনি, এটা তো ঠিক হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এটা হয়ে যাবে। মিল থেকে নতুন কোনো চালের বস্তা বের হলে সেখানে নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে। এটা নিয়ে যতটা গণসংযোগ যা করা দরকার সবাই আমরা করেছি। মিল মালিকরা নির্দেশনা মানছেন কিনা- সেটাও আমরা মনিটর করবো।’
যা আছে নির্দেশনার পরিপত্রে
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি চালের বস্তায় ধানের জাত, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, নিট ওজন, উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেট মূল্য লেখার নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১৪ এপ্রিল থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
পরিপত্রের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার, সকল জেলা প্রশাসক, সকল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সকল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক-সহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানোও হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন-এর সই করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদকারী কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমতো জাতের ধান, চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন
ধানে তাপপ্রবাহের আগাম সতর্কবার্তা ‘ট্রাক সিন্ডিকেটের’ কবলে চাল, বাজারে অস্থিরতাএ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজার মূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে বস্তায় এসব তথ্য লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, বস্তার ওপর এসব তথ্য কালি দিয়ে লিখতে হবে। চাল উৎপাদকারী মিল মালিকের সরবরাহ করা সকল প্রকার চালের বস্তা ও প্যাকেটে ওজন (৫০/২৫/১০/৫/১) উল্লেখ করবেন। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিলগেট দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে।
এই পরিপত্রের আলোকে সকল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩ এর ৬ ও ৭ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানানো হয়।
আরএমএম/এসএইচএস/এমএস