দেশজুড়ে

হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

গ্রাম-বাংলার নানা উৎসব-পার্বনে এক সময় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে লাঠি খেলা। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা আর নতুন খেলোয়ারের অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খেলাটি। ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছেন মানিকগঞ্জের কয়েজন প্রবীণ লাঠিয়াল। তারা তৈরি করছেন নতুন প্রজন্মের খেলোয়ার। যাদের মাঝে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি টিকে থাকবে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নালী-বরুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সালাম এ খেলোয়ার তৈরির উদ্যোক্তা। তার সঙ্গে প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন-স্থানীয় প্রবীণ লাঠিয়াল হেলাল উদ্দিন, আফসার উদ্দিন, মজিবর রহমান, মিন্টু মিয়া এবং মানিক মিয়া। যৌবনে এরা সবাই লাঠি খেলায় মাঠ কাঁপানো খেলোয়ার ছিলেন। মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় তারা দাপটের সঙ্গে এ খেলায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বয়সের কারণে বর্তমান লাঠি খেলার মতো তাদের শারীরিক শক্তি ও সাহস নেই। আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে জানান, লাঠি খেলা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। কিন্তু দিন দিন খেলাটি হারিয়ে যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ নতুন খেলোয়ার সৃষ্টি না হওয়া। গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই নতুন খেলোয়ার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রথম পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যায়ের ৩০ জনকে এ খেলার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবে লাঠি খেলায় অংশ নিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।প্রবীণ খেলোয়ার হেলাল উদ্দিন ও আফসার উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, এক সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে লাঠি খেলা দেখিয়ে তারা দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর খেলতে পারেন না। যাদের এ খেলা শেখানো হচ্ছে তাদের মাঝেই ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা টিকে থাকবে বলে আশা করেন তারা।নালী স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা গেল প্রবীণ খেলোয়ারা নবীনদের লাঠি খেলার নানা কলা-কৌশল শেখাচ্ছেন। পায়ে ঘুংগুর দিয়ে বাদ্যের তালে তালে প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে আত্মরক্ষার পাশাপাশি আক্রমণ করছিলেন তারা। গত ১ বৈশাখ নালী স্কুল মাঠে নতুন খেলোয়ারদের দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এ খেলা দেখতে নানা বয়সী হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। দর্শকরা নতুন লাঠিয়ালদের খেলা দেখে মুগ্ধ হন।প্রশিক্ষণার্থী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রেদুয়ান করিম রাতুল জাগো নিউজকে জানান, আমার দাদা লাঠি খেলা জানেন। দাদার খেলা অনেক দেখেছি। এখন নিজে শিখছি। খুব ভাল লাগছে। আমাদের খেলা দেখে লোকে যখন হাতে তালি দেন তখন আরও ভালো লাগে।৮ম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা শিখতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। ওস্তাদরা খুব যত্ন সহকারে খেলার নানা কলা-কৌশল শেখান। ভাল লাগে।প্রশিক্ষকরা আশা করছেন, নতুন প্রজন্মের এ খেলোয়ারদের মাঝেই ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা টিকে থাকবে। আগামী দিনে নানা উৎসব-পার্বণে আবারও গ্রামীণ জনপদে বিনোদন জোগাবে এ খেলায়াররা। দেশের প্রতিটি জেলাতেই এমনভাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।বি.এম খোরশেদ/এসএস/এমএস

Advertisement