নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। একই সঙ্গে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে মাঠের আন্দোলনসহ নানান কৌশল অবলম্বন করেছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি, ডাক দিয়েছিল নির্বাচন বর্জনেরও। তবে নির্বাচন প্রতিহতে ব্যর্থ হয় বিরোধীদলগুলো। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরষ্কুশ জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।
Advertisement
এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে কাজ করছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকা নেতাদের মূল্যায়ন করার কথা বলে এরই মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন নেতাকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।
তবে সম্প্রতি পদোন্নতি দেওয়া নেতাদের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন
Advertisement
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জাগো নিউজকে জানান, মূল্যায়নের নামে এমন কিছু নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যারা ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজপথেই ছিলেন না। এমন নেতাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যিনি কি না আন্দোলনের তিন মাস দেশেই ছিলেন না।
গত ১৯ মার্চ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির কয়েকজন নেতার পদোন্নতির কথা জানানো হয়।
আমি মনে করি যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, দল তাদের কোনো না কোনো যোগ্যতা খুঁজে পেয়েছে। তবে কী সেই যোগ্যতা তা আমার জানা নেই।—মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
এতে বলা হয়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুল হককে দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়েছে।
Advertisement
বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসব পদোন্নতির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর না করে উল্টো রাজপথে যাদের উল্লেখ করার মতো ভূমিকা ছিল না তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তিন পদে রদবদল বিএনপিতে মিল্লাত-জুয়েল-আবেদের পদোন্নতিদলীয় সূত্র বলছে, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হন। এরপর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থেকে এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়েছেন। তিনি আদৌ এই পদোন্নতির যোগ্যতা রাখেন কি না, কেননা তিনি ঢাকা জজ কোর্টে আইনজীবীদের যে রাজনীতি করেন সেখানে তার পারফরম্যান্স কী তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রয়াত অ্যাডভোকেট সানাউল হক মিয়ার যে পারফরম্যান্স ছিল মাসুদ তালুকদারের তা রয়েছে কি না, উঠছে সে প্রশ্নও।
বরং অভিযোগ রয়েছে, মাসুদ তালুকদার জজ কোর্টের রাজনীতিতে গ্রুপিং (বিভাজন) তৈরি করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে তিনি কী এমন পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন যে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হলো? কার সুপারিশে কীসের ভিত্তিতে তিনি পদোন্নতি পেলেন তা নিয়ে দলের মধ্যে নানান কথা রয়েছে।
সম্প্রতি যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের পার্টি উপযুক্ত মনে করেছে। সর্বক্ষেত্রে সবাই খুশি নাও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যুক্তিসংগত দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করলে ভালো হবে।—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
বিএনপির আরেক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া শিক্ষক রাজনীতি করেন। শিক্ষক রাজনীতিতে তিনি কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, যেখানে তিনি শিক্ষকদেরই একত্রিত করতে পারছেন না সেখানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো পদ পেয়ে তিনি কী করবেন? আরেক নেতা রাশেদুল হককে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কয়েকদিন বিদেশ থাকলেই তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না- এমন প্রশ্ন দলের ভেতরেই।
আরও পড়ুন
বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সরকার ছুতো খুঁজছে : মঈন খান বিএনপি মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন: নানকপদোন্নতির বিষয়ে জানতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সদ্য কারামুক্ত ছাত্রদলের এক সাবেক নেতা বলেন, ‘তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে কয়েকজন সিনিয়র নেতা সুযোগ বুঝে তাদের অনুসারীদের পদোন্নতি দিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এমন কিছু নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে যাদের রাজপথে ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।’
আরও পড়ুন
বিএনপিতে কী চলছে? নারী নেতৃত্ব সংকট বিএনপিতেএ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, দল তাদের কোনো না কোনো যোগ্যতা খুঁজে পেয়েছে। তবে কী সেই যোগ্যতা তা আমার জানা নেই।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সম্প্রতি যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের পার্টি উপযুক্ত মনে করেছে। সর্বক্ষেত্রে সবাই খুশি নাও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যুক্তিসংগত দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করলে ভালো হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের অবদান আছে বলেই দল পদোন্নতি দিয়েছে।’
কেএইচ/ইএ/এসএইচএস/জেআইএম