জাতীয়

কেউ বেষ্টনী ডিঙিয়ে সিংহের ছবি তুলছেন, কেউ বানরকে বাদাম ছুড়ছেন

চিড়িয়াখানার আফ্রিকান সিংহের খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের জটলা। নিরাপত্তাবেষ্টনী ডিঙিয়ে সিংহের ছবি তুলছিলেন গোটা বিশেক যুবক। এই খাঁচার সামান্য দূরেই বাঘের খাঁচা। সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনীর ওপর দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ভুভুজেলা বাজাচ্ছেন। এ সময় একজনকে বাঘ ও বানরের খাঁচার দিকে বাদাম ছুড়তে দেখা যায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদের দিন দুপুরে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ বিকেল পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ দর্শনার্থী এসেছেন।

এদিন প্রাণীদের নানা কায়দায় উত্ত্যক্ত করতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে চিড়িয়াখানার কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি। চিড়িখানার প্রাণীকে উত্ত্যক্ত করলে দুই হাজার, প্রাণীকে খাবার দিলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া চিড়িয়াখানার সম্পদ নষ্ট করাও অপরাধ।

দুপুরে ওয়াটারবাক খাঁচার সামনের আমগাছে দর্শনার্থীদের আম পাড়তে দেখা যায়। এমনকি নিয়ম ভেঙে চিড়িয়াখানা থেকে পাহাড়ি লতাপাতা ও গাছগাছালি তুলছে অনেকে।

Advertisement

জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, বাঘ-সিংহের খাঁচায় নতুন বেষ্টনী দিয়েছি। স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে এই বেষ্টনীটি প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উঁচু। একটা মানুষের উচ্চতার চেয়েও বেশি। এত উঁচু বেষ্টনী পার হয়েও কেউ যদি মরতে চাই আমাদের কী করার আছে?

আরও পড়ুন: চিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু

তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করতে মাইকিংসহ নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেখানে তো চিড়িয়াখানার লোকজন থাকার কথা ছিল। আইন না মানার প্রবণতা বাড়ছে না, এটা কমছে। আগের চাইতে অনেক কমেছে। কিন্তু শতভাগ মানুষ যে নিয়ম মানছে তা নয়।

চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড়, সমস্যা ফুটপাত

Advertisement

দুপুর পর্যন্ত চিড়িয়াখানার প্রত্যেকটি খাঁচার সামনেই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। তবে চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ফুটপাতে ছিল হকার ও যানবাহনের রাজত্ব। খেলনা, খাবার, বিরিয়ানির দোকান কী নেই চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ফুটপাতে। বিসিআইসি কলেজ থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ গজ সড়কে শতাধিক হকার দেখা গেছে।

ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি এমনকি পর্দা টানিয়ে ক্যারাম খেলতে দেখা গেছে। এতে দর্শনার্থীরা নেমেছেন রাস্তায়। আবার রাস্তাও ছিল বাস, রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের নিয়ে আসছে বিভিন্ন রুটের বাস। বাস সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ায়, চিড়িয়াখানার মুখে তৈরি হয়েছে যানজট।

এদিন গরমে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি প্রাণীদের প্রাণও ছিল ওষ্ঠাগত। এজন্য বাঘ, সিংহ, বানর, হরিণকে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঢাকার অপরপ্রান্ত সাভার থেকে এসেছিলেন আহনাফ ও তার বাবা আরিফুল ইসলাম। তেমনি কাছাকাছি দূরত্বের মানুষজনও ভিড় করেন চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার বাইরে ও ভেতরেও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সেই ভিড় আরও বাড়ে।

আরিফুল বলেন, এবার ঈদে বাড়ি যায়নি। কারণ ছুটি পাইনি। এজন্য ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে এলাম। চিড়িয়াখানার পরিবেশ আগে যেমন দেখেছি, এখনো তেমন। কোনো পরিবর্তন নেই। ছেলে বাঘ, সিংহ দেখে অনেক মজা পেয়েছে।

চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ঈদের দিনে দুপুর পর্যন্ত প্রায় সোয়া লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। প্রচণ্ড গরম পড়ায় মানুষ, বিকেলে বের হচ্ছে।

মাজার রোড থেকে চিড়িয়াখানা এসেছেন সাত বন্ধু। তারা সবাই দোকান ও বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। সাইফুল নামে তাদের একজন বলেন, সারা রোজায় কাজ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে হতে পারিনি। ঈদের দিন ঘুরছি। চিড়িয়াখানা ঘোরার পর, বিকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেন যাবো।

দুই ভাই-বোন মানসুর আহমেদ ও তানহা আহমেদ। বাঘের খাঁচার সামনে কথা হয় তাদের সঙ্গে। মা-বাবার সঙ্গে কল্যাণপুর থেকে প্রথমবার চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা ক্লাস এইটে পড়া তানহা বলে, খুবই ভালো লাগছে। এখানে এসে অনেক প্রাণী দেখলাম। এগুলো আগে টিভিতে দেখেছি।

তার ভাই আরাফের কথায়, প্রাণীরা প্রচণ্ড রোদে অনেক ক্লান্ত। সবাই শুয়ে, বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। নতুন-নতুন অনেক প্রাণী দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে।

এসএম/এমআরএম/এএসএম