জাতীয়

‘ছুটির দরখাস্ত করে টিকিট কেটে ব্যাগও গোছাই, কিন্তু ছুটি পাইনি’

মো. শাহাবুদ্দিন খান। অতিরিক্ত আইজিপি। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১২, র্যাব-১০, র্যাব-৪) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া পুলিশ কমিশনার হিসেবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ অ্যাডিশনাল আইজিপি (ফিন্যান্স) হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন।

Advertisement

পেশাদারত্ব, সাহসিকতা এবং সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ দুবার বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক (বিপিএম) পুরস্কারে ভূষিত হন অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান।

২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর হাইওয়ে পুলিশে আমূল পরিবর্তন আনেন তিনি। বিশেষ করে এক বছরে সড়ক-মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে চালু করেন অনলাইন ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে মূল ভূমিকায় থাকেন। সে কারণে পুলিশের মতো একটি পেশায় সব উৎসবে ছুটি মেলে না। অন্য পেশার সবাই যেখানে ছুটিতে যেতে পারেন, সেখানে সব পুলিশ সদস্য ছুটিতে যেতে পারেন না। আমার জীবনেও একই ঘটনা ঘটেছে

Advertisement

সম্প্রতি বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাগো নিউজকে কর্মজীবনে ঈদ উদযাপনের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।

আরও পড়ুন

ঈদযাত্রা আরামদায়ক করতে যা করছে ট্রাফিক বিভাগ ভয়াবহ যানজটে নাকাল নগরবাসী, কোন পথে ঢাকা? ঈদে যানজট নিরসনে থাকছে ড্রোন, আনফিট গাড়ি নামালেই ব্যবস্থা

জাগো নিউজ: পুলিশে চাকরি জীবনের প্রথম ঈদে ছুটি পেয়েছিলেন কি না?

শাহাবুদ্দিন খান: ২৯ বছরের চাকরি জীবনে পুলিশের মতো একটি পেশায় জরুরি ডিউটি থাকে সবচেয়ে বেশি। আমাদের জাতীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো মানুষ আনন্দের সঙ্গে পরিবার নিয়ে উদযাপন করে। কিন্তু যখন এসব উৎসব উদযাপনের সময় আসে তখন পাশাপাশি প্রশ্ন আসে সেই উদযাপন নিরাপদ করার। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে মূল ভূমিকায় থাকেন। সে কারণে পুলিশের মতো একটি পেশায় সব উৎসবে ছুটি মেলে না। অন্য পেশার সবাই যেখানে ছুটিতে যেতে পারেন, সেখানে সব পুলিশ সদস্য ছুটিতে যেতে পারেন না। আমার জীবনেও একই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: এ পর্যন্ত চাকরি জীবনে কতটি ঈদে ছুটি পেয়েছেন?

শাহাবুদ্দিন খান: হয়তো কোথাও এমন পোস্টিং ছিল যেখানে উৎসব-পার্বণে এতটা দায়িত্ব ছিল না। তবে বেশিরভাগ সময় ছুটিতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একবার মনে আছে- ঈদে ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছি, টিকিট কেটেছি এবং ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছি, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমি ছুটি পাইনি। পরে ব্যাগ খুলে মন শক্ত করে নিজেকে বুঝিয়ে ডিউটিতে গিয়েছি।

হয়তো কোথাও এমন পোস্টিং ছিল যেখানে উৎসব-পার্বণে এতটা দায়িত্ব ছিল না। তবে বেশিরভাগ সময় ছুটিতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একবার মনে আছে- ঈদে ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছি, টিকিট কেটেছি এবং ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছি, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমি ছুটি পাইনি। পরে ব্যাগ খুলে মন শক্ত করে নিজেকে বুঝিয়ে ডিউটিতে গিয়েছি

ঈদে হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য ছুটিতে যাবেন না। যারা বাড়ি যাবেন তারা যেন ঠিকঠাক মতো বাড়ি পৌঁছাতে পারেন হাইওয়ে পুলিশ সেদিকে খেয়াল রাখবে। অন্য ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছুটিতে যেতে পারেন না। এটা এক ধরনের তৃপ্তি। কর্তব্যের জায়গা থেকে যখন যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা।

জাগো নিউজ: ঈদের সময় ডিউটিতে থাকাকালীন পরিবার-অফিস কীভাবে ম্যানেজ করেন?

শাহাবুদ্দিন খান: ঈদের সময় কিংবা এ ধরনের উৎসব যখন আসে তখন আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এ সময়ে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকি। কারণ, ঈদযাত্রার শুরু থেকে ফিরতি যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইজিপি মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও ব্যস্ত থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই তখন পরিবারকে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। আমি এক্ষেত্রে সব সময়ই পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি। একজন পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্য হিসেবে সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে।

 

আরও পড়ুন

সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ১২২ স্পট, যানজট নজরদারিতে রাখবে ড্রোন ঈদে ঢাকা ছাড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক পুলিশই বেশি ঝুঁকিতে

জাগো নিউজ: সবাই যখন প্রিয় সন্তানের হাত ধরে ঈদের মাঠে নামাজ আদায় করতে যান, তখন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সেই দৃশ্য দেখে অনুভূতি কেমন হয়?

শাহাবুদ্দিন খান: প্রতিটি বড় ঈদগাহ মাঠ ঘিরে পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকতে হয়। নিরাপত্তা জোরদার করতে হয়। সড়কে ডিউটি থাকে, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ডিউটি থাকে। অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক পুলিশ সদস্য ঈদের নামাজও পড়তে পারেন না। সন্তানের হাত ধরে বাবা যেভাবে ঈদগাহে যান সেভাবে একজন পুলিশ সদস্যের হয়ে ওঠে না। ওই সময়টাতে ওই পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজ করতে হয়। জনকল্যাণে, রাষ্ট্রের স্বার্থে এবং চাকরির বাস্তবতার ক্ষেত্রে এটি আমাদের মেনে নিতে হয়। সে ধরনের মানসিক প্রস্তুতিও থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তখন নিজের কাছেও শান্তি লাগে। অন্যের আনন্দ নির্বিঘ্ন করতে পারাটাই আমাদের আনন্দ।

প্রতিটি বড় ঈদগাহ মাঠ ঘিরে পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকতে হয়। নিরাপত্তা জোরদার করতে হয়। সড়কে ডিউটি থাকে, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ডিউটি থাকে। অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক পুলিশ সদস্য ঈদের নামাজও পড়তে পারেন না। সন্তানের হাত ধরে বাবা যেভাবে ঈদগাহে যান সেভাবে একজন পুলিশ সদস্যের হয়ে ওঠে না

জাগো নিউজ: পরিবারের সঙ্গে ঈদ অভিজ্ঞতা কেমন?

শাহাবুদ্দিন খান: কোনো কোনো পজিশন আমাদের আরও বেশি ব্যস্ত রাখে। এসব জায়গায় পদায়িত থেকে কাজ করতে গেলে পরিবারে সময় আরও কম দেওয়া হয়। পুলিশের চাকরির ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার সাপোর্টিভ হলে একজন পুলিশ সদস্যের ক্যারিয়ারও উন্নত হয় এবং ডিউটিতে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারে।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং ঈদের শুভেচ্ছা।

শাহাবুদ্দিন খান: আপনাকে, জাগো নিউজ পরিবার এবং দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

টিটি/এমকেআর/এমএস