জাতীয়

‘গার্ডের চাকরি করলে কপালে ঈদের আনন্দ-ফুর্তি থাহে না’

দেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। চারিদিকে আনন্দ হিল্লোল। কিন্তু সেই আনন্দধারার পাশ কাটিয়ে কেউ কেউ কর্মে অবিচল।তেমনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনায় দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে গিয়ে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিলে অনেকেরই দেখা মেলে তাদের।

Advertisement

মতিঝিলের দিশকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে পাওয়া গেল দুজন নিরাপত্তা কর্মীকে। একজন মোক্তার খান, আরেকজন আব্দুল কুদ্দুস। দুজনই নিরাপত্তা কর্মী সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারা ইসলামী ব্যাংক ভবনে দায়িত্ব পালন করছেন।

মোক্তার খানের বাড়ি শরিয়তপুরের ডামুড্যায়। তিনি বলেন, ‘পরিবার বাড়িতেই থাহে। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে থাহে। আমার চাকরির বয়স ৮ বছর। চাকরি জীবনে কোনদিন ঈদ পরিবারের লগে করতে পারি নাই। অনেক সময় আপনার ভাবী রাগ করে। পোলাপানও রাগ করে। জোর করে তো ছুটি নিতে পারি না।’

আরও পড়ুন

Advertisement

একদিন ভালো খাওয়াটাই তাদের কাছে ঈদ

মোক্তার খান বলেন, ‘ঈদের দিন সবাই আনন্দ করতাছে। আমরা পোস্টে বসে বসে কাটাইয়া দেই। ঈদের দিন ঠিক মতো ভাতও খাইতে পারি না। আশেপাশে সব হোটেলও বন্ধ। গার্ডের চাকরি করলে কপালে ঈদের আনন্দ-ফুর্তি থাহে না। ঈদের দিনে বেজার হয়ে বইয়া থাকতে অয়। ঈদের মধ্যে ডিউটি কড়াকড়ি থাকে। আমরা মোট সাতজন আছি। এরমধ্যে দুইজন ছুটিতে গেছে। আমরা পাঁচজন আছি। যে দুজন বাড়িতে গেছে, তাদের ডিউটিও আমাদের টানতে হইতাছে। কেউ কেউ ৮ ঘণ্টার জায়গায় ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতাছি। কেউ কেউ ২৪ ঘণ্টাই করতাছি। কিছু করার নাই।’

তিনি আরও বলেন, আরামবাগে সিকিউরিটি কোম্পানির মেসে থাহি। গত ৩ দিন ধরে আমি ডিউটির ওপরেই আছি। এখানে একটা গোসলের জায়গা আছে, সেখানে গোসল করি।

একইসঙ্গে কাজ করা আব্দুল কুদ্দুসের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বরগুনায়। তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী আছেন। ছেলে মেয়ে দুজনকেই বিয়া দিয়েছি। নাতীরা আছে বাড়িতে। ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নাতীগো লাইগ্যা জামা-কাপড় কিন্যা দিছি। পরিবারের সবাই একলগে থাকলে ঈদটা ভালো অয়। কিন্তু চাকরি তো করা লাগে। পেটও তো চালানো লাগে।’

দিলকুশার ইস্টার্ন ব্যাংকের বুথে কথা হয় নিরাপত্তা কর্মী মো. নাহিদের সঙ্গে। বয়সে তরুণ। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা। নাহিদ বলেন, ‘এখনও বিয়ে করিনি। বাড়িতে বাবা আছেন, বাবার হৃদরোগ আছে। মাও বৃদ্ধা। বাড়িতে এক ভাই ও এক বোন আছে। ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়।’

Advertisement

ঈদের দিন বুথেই কাটবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোম্পানি থেকে কোন খাবার দিবে না। কমলাপুরে কোম্পানির মেসে থাকি। বাসা থেকে গতকালের রান্না করা বাসি ভাত নিয়ে আসছি। ওটাই দুপুরে খাব।

তিনি বলেন, ‘খুবই সামান্য বেতন পাই। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার। অসুস্থ বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। বাবার প্রতিমাসে ওষুধই লাগে ৪ হাজার টাকার। নিজের চলতে অনেক কষ্ট। আমি নিজে রান্না করে খাই, পুরো রোজার মাস গেছে একটা মুরগি কিনে রান্না করে খেতে পারিনি। একদিন শুধু একটা তেলাপিয়া মাছ কিনছিলাম। এছাড়া শুটকি ও সবজি কিনে দিন চালাইছি।’

নাহিদ বলেন, ‘আমি মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করছি। কামিল পাস করেছি। পরিবারের বড় ছেলে। অনেক দায়িত্ব। আগে বেকার ছিলাম, এখন ছোটখাটো হলেও চাকরি করছি। যতটুকু পারছি সীমিত আয় দিয়ে বাবা-মাকে দেখছি। তাই ঈদের সময় পরিবারের কাছে থাকাটা বড় মনে হচ্ছে না। যদিও খারাপ লাগছে।’

আরএমএম/এসআইটি/এমএস