বছরে দুইটি ঈদ। তখন ভাবতাম আরও কয়েকটি হলে ভালো হতো। রমজান মাস থেকেই করতাম ঈদের অপেক্ষা। ২৯ নাকি ৩০ কয়টি হবে রোজা! ঈদের জন্য রমজানে এই প্রহর গোনা ছিল অন্যরকম আনন্দের। যেই না আকাশে চাঁদ দেখা যেত বিটিভির পর্দায় বেজে উঠত, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
Advertisement
সমুদ্র সৈকত কিংবা পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা তখনো মাথায় আসেনি। তবে পরিবারের, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো ঈদ ছিল মধুর স্মৃতি। শেষ ১০ রোজা থেকেই চলত ঈদের কেনাকাটা। ঈদের বাজারে তখন ভিড়। ভিড় ঠেলে পছন্দের জামা, জুতা, পাঞ্জাবি কিনে বাসায় ফিরে বার বার দেখতাম। তবে ঈদের আগে কাউকে দেখাতাম না, পুরোনো হয়ে যাবে তাই।
এরপর চাঁদ রাত শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম। খুব ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যেত। উঠেই দেখতাম মা সেমাই, ক্ষীর বানিয়ে ফেলেছেন। অন্যান্য পদের খাবার বানানোর প্রস্তুতি চলছে। তাড়াহুড়া করে গোসল সেরে, বাবার সঙ্গে দুই ভাই যেতাম মহল্লার ঈদগাহে।
ঈদগাহের মাঠের বাইরে সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকতেন অসহায়রা। বিশেষ এই দিনে তাদের ঈদকেও রাঙিয়ে তুলতে চেষ্টা করতেন মুসল্লিরা। ঈদগাহের সেই মাঠে দেখা হতো স্কুলে-মহল্লায় থাকা বন্ধুদের সঙ্গে। মসজিদে ছোটদের দুরন্তপনা যেমন হয় তেমনটি হতো।
Advertisement
আরও পড়ুন
ঈদের আনন্দের মাঝেও অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার চিন্তানামাজ শেষে প্রথম কোলাকোলি করতাম বাবার সঙ্গে তারপর ভাই। পরিচিত সবাই নিজে থেকেই কোলাকোলি করতেন। কারণ তখনো ছোট আমি। পেতাম সালামি, পরিচিত যারা ছিলেন দিতেন তারাও। এরপর নতুন জামা পরে বাইরে বের হওয়ার পালা।
ছোট তাই মহল্লার বাইরে যেতাম না। এলাকার খেলনার দোকানগুলোয় যেতাম। চটপটি, ফুচকা, হালিমের ভাসমান দোকানগুলোও বসতো। খেলনা বন্দুকের প্রতি ছিল ভীষণ লোভ। বন্ধুরা মিলে খেলনা বন্দুক কিনে খেতাম চটপটি বা হালিম। কার বন্দুকের বুলেট কতদূর যায় এ নিয়েও চলত প্রতিযোগিতা।
কোনো বন্ধু আসতে দেরি করলে, বাসায় যেয়ে নিয়ে আসাও ছিল আমাদের বন্ধুমহলের ঐতিহ্য। সেই সুযোগে পাওয়া যেত বাড়তি সালামি। সেমাই খেতে খেতে করতাম বন্ধুর তৈরি হওয়ার অপেক্ষা। এরপর বাসা থেকে বের হলে সবায় মিলে তাকে করতাম বকাঝকা।
Advertisement
বিকাল-সন্ধ্যার মুহূর্ত রাঙিয়ে তুলতো আত্মীয়স্বজন। রাতে সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে চলত রাতভর আড্ডা। সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটত ঈদের দিনে। ছিল না কষ্ট, কোনো অপূর্ণতা। এখনকার ঈদে আগের মতো কোনো আবেগ নেই, নেই আহামরি আনন্দ। বিটিভির পর্দায় এখনো ভেসে উঠে কাজী নজরুল ইসলামের ঈদের গানটি। তবে শৈশবের সেই মাঠে ঈদের নামাজ হয়না বহুবছর। যেতে হয় মসজিদে।
সালামি দেওয়া কিংবা পাওয়ায় নেই কোনো উচ্ছ্বাস। নতুন জামা কেনা কিংবা লুকিয়ে রাখায় নেই বাড়তি আনন্দ। খেলনার দোকানগুলোর জায়গায় আজ অট্টালিকা। এলাকায় দলবেঁধে ঘোরাঘুরির দিনগুলো আজ অতীত। বন্ধুরা সবাই আছে, নেই শুধু সেই দিনগুলো আর সময়। তবুও ফিরতে মন চায় শৈশবের দিনগুলোয়। বলতে ইচ্ছে করে, ‘ঈদ তুমি শৈশবে ছিলে কত মধুর, ফিরে এসো আরেকটিবার।’
আরও পড়ুন
দেশে দেশে ঈদ উদযাপনের ভিন্ন রীতি ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়কেএসকে/এএসএম