দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিমদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে এটি একটি। এদিন ঈদগাহে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সেমাইসহ নানা মিষ্টান্ন খাবারের আয়োজন থাকে। পাড়াপড়শি ও আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে থাকে নানা আয়োজন।
Advertisement
আনন্দঘন এ দিনটি একাত্তরের রণাঙ্গনে কেমন ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেসময় কেমন ঈদ কাটিয়েছেন— এ নিয়ে জাগো নিউজের আয়োজন রণাঙ্গনের ঈদ স্মৃতি।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আর ৩০ দিনের মতোই ছিল ঈদের দিনটি। তেমন উৎসব মুখর ছিল না। উদযাপন করা হয়নি তেমন আনুষ্ঠানিকতাও। সে সময় ধ্যান-জ্ঞান ছিল দেশ স্বাধীন করা। সেজন্য প্রাণপণে লড়ে গেছেন সবাই।
আরও পড়ুন
Advertisement
এ নিয়ে কথা হলে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘৭১ এ আমি ছিলাম ক্যাম্পে। আমরা তো বলতেই পারবো না কেমনে ঈদ গেছে। জানতাম যে, আজ ঈদ। একটু খাওয়া হয়েছে। একটু দোয়া-খায়ের করেছি। নামাজ পড়েছি। ঈদের চেয়ে বেশি চিন্তা করেছি কবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে! যেভাবে অত্যাচার হচ্ছিল, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছিল, মানুষ মেরে ফেলছিল, এটার অবসান কবে ঘটবে! কবে আমরা ওদের তাড়াতে পারবো? এ চিন্তা বেশি ছিল। ঈদে আলাদা করে আনন্দ তখন আমাদের ছিল না।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘রোজার ঈদের কিছুদিন পরেই ১৬ ডিসেম্বর বা আমাদের বিজয় আসছে। ঈদুল ফিতরের সময় শেষ মুহূর্তের যুদ্ধ চলছিল। তুমুল যুদ্ধ। সীমান্তে উত্তেজনা ছিল। আমরাও ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা আক্রমণ করছি। আমার ঠিক খেয়াল হচ্ছে না, ঈদটা কত তারিখে হয়েছে। তবে, এতটুকু মনে আছে রোজার ঈদের পরে ও কোরবানির ঈদের আগে আমাদের বিজয় আসছে। ঈদ বলতে আমাদের কাছে কিছু ছিল না। আর ৩০ দিনের মতোই ছিল ঈদের দিন। আলাদা করে ঈদের আনন্দ কিছুই ছিল না।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম বলেন, ‘তখন সারাদেশ বাঙালিরা যুদ্ধের মাঠে ছিল। তখনকার ঈদ ছিল বাঙালিরা এক হয়ে জীবনবাজি রেখে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা। ওই সময় অন্য কোনো চিন্তা ছিল না। বন্যার পানি সব জায়গায় ছিল। মানুষ আনন্দের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ঈদের আনন্দটা তারা ভাগাভাগি করেছে যুদ্ধে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। ৯০ শতাংশ লোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছে। যুদ্ধের কাজেই তারা লিপ্ত ছিল। ওই সময়ে ঈদের আলাদা উৎসব বা কোনো কিছু ছিল না।’আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য কামনা এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহে একসঙ্গে নামাজ পড়লেন ৬ লাখ মুসল্লি ‘মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের ঈদ’জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সেসময় আমরা ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলাম। ওখানে ঈদের কিছুই হয়নি। যুদ্ধের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছিল। ঈদ নিয়ে আলাদা কোনো ব্যাপার ছিল না।’
Advertisement
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমাদের ঈদ কেটেছে ভারতে দেরাদুনের তান্দুয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে। আলাদা করে ঈদের প্রস্তুতি ছিল না। ছুটিও ছিল না। আমরা ট্রেনিং ক্যাম্পে যতটুকু পারা যায়, সেভাবে ঈদ করেছি। মুক্তিসংগ্রামের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুত করাটাই ধ্যানজ্ঞান ছিল। অন্য কোনো চিন্তা ছিল না।’
এসইউজে/এমএএইচ/এমএস