দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল সরকারি উদ্যোগে চলছে সড়ক মেরামতের কাজ। কিন্তু কাছে গিয়ে জানা গেলো সকরারি উদ্যোগে নয়, একজন দিনমজুর নিজের টাকায় শ্রমিক ভাড়া করে সড়ক মেরামতের কাজ করাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রাস্তার দুই পাশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন আমির হোসেন (৩৪) নামের ওই দিনমজুর।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন, নিজের টাকা ব্যয় করে সীমান্তের জিরো লাইনঘেঁষা এসব সড়কে নিজেই এসব গাছ লাগান আমির হোসেন। এমনকি কাঁচা সড়কের গর্ত বা খানাখন্দ দেখলেই সেটি মেরামত করাই যেন তার নেশা।
দিনমজুর আমির হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুরের মোত্তুজা আলীর ছেলে।
বিশ্বনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে সড়কের গর্তে ফেলে ভরাট করছেন শ্রমিকরা। এমনকি সড়কের পাশ থেকে কোদাল দিয়ে মাটি কাটা ও মাথায় করে সড়কে ফেলে মেরামতের কাজ করছেন আমির হোসেন নিজেও। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এভাবেই নিজের টাকা খরচ করে কাঁচা সড়ক মেরামতের কাজ করছেন তিনি।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা কাউসার আলী বলেন, আমির হোসেন একজন দিনমজুর। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। এতে যে অর্থ পান তা দিয়ে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগান তিনি। গাছ লাগানোর পাশাপাশি প্রতিদিন গাছে পানি দেওয়াসহ পরিচর্যার কাজও করেন তিনি। কাঁচা সড়কের গর্ত বা খানাখন্দ দেখলেই সেটি মেরামত ও ফাঁকা সড়কে গাছ লাগানোই তার নেশা।
আবুল কালাম নামের আরেকজন বলেন, আমাদের বিশ্বনাথপুর গ্রামের পাশে একটি ফসলের জমি আছে। এ জমিটি ভারতীয় সীমান্তের পাশে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার জমিতে যাওয়ার যে রাস্তা এটি কাঁচা। এখানে যেতে অনেক সমস্যা হয়। আমির হোসেন রাস্তাটি সবসময় মেরামত করে দেন। এতে শুধু আমি না, এখানকার অনেক কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
দিনমজুর আমির হোসেনের স্ত্রী সুখী বেগম, সংসার নিয়ে আমার স্বামীর তেমন চিন্তা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা হলেও দিনের একবেলা কাজ করে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত করেন কাঁচা সড়ক মেরামতের কাজ। এমনকি দুদিন ধরে আমার শিশুসন্তানের জ্বর। তার ওষুধও এনে দিচ্ছেন না তিনি। তিনি শুধু রাস্তা নিয়ে পাগল থাকেন।
কথা হয় সমাজসেবী ও বৃক্ষপ্রেমী আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার ইচ্ছে মানুষের উপকার করা। মানুষের কষ্ট আমি দেখতে পারি না। কিন্তু বেশি অর্থ দিয়ে যে মানুষের উপকার করবো সেই সামর্থ্যও আমার নেই। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়েই আমি মানুষের জন্য কাজ করি। এতে আমি মানসিক প্রশান্তি পাই। আজীবন এভাবেই সড়ক মেরামত ও গাছ লাগিয়ে যাবো।
Advertisement
আমিরের এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামাণিক বলেন, এটি অবশ্যয় একটি ভালো কাজ। এমনকি আমাদের যদি কোনো সুযোগ থাকে তাকে সহায়তা করা হবে। আমরা আমিরের বিষয়ে খোঁজখবর নেবো।
সড়ক মেরামত ও গাছ লাগানোর পাশাপাশি বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়ে দেওয়ার কাজও করেন দিনমজুর আমির হোসেন। তবে এসব কাজ করে ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
এসআর/এমএস