জাতীয়

চাঁদরাতে পা ফেলার জায়গা নেই মিরপুরের ফুটপাতে

‘একদাম ৩০০’, ‘বাইছা লন ৩০০’, ‘কালারে কালারের ৩০০’, ‘শাড়ি লন ৩০০’ বিরতিহীন এমন হাঁকডাকে ক্রেতার নজর কাড়তে ব্যস্ত বিক্রেতারা। অন্য কোনোদিকে তাদের তাকানোর সুযোগ নেই। শেষ সময়ে একদামেই পণ্য বিক্রি করছেন তারা। ভিড় ঠেলে ক্রেতা বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেন, পণ্য দেখে দাম পরিশোধ করছেন। এভাবেই স্বল্পমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শার্ট, জুতা, পাঞ্জাবি ও মেয়েদের পোশাক।

Advertisement

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন ফুটপাতে বেচাকেনার দৃশ্য এটি। মিরপুর ১০ থেকে চারটি রাস্তা চারদিকে গেছে। একটি মিরপুর ১২, একটি মিরপুর ১, একটি কাজীপাড়া আর অন্যটি মিরপুর ১৩ নম্বরের দিক। প্রতিটি রাস্তার ফুটপাতেই হকাররা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট এসব ফুটপাত। কোথাও ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় উঠেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে পথচারীদের ফুটপাতে ওঠার সুযোগ নেই। রাস্তায় বেচাকেনা জমজমাট হওয়ায় মিরপুর ১৩ নম্বর যাওয়ার রাস্তাটিতে হালকা যানজট দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বিকিকিনির এই ব্যস্ততা চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। তুলনামূলক কমদামে কেনাকাটার জন্য শেষ সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ফুটপাতগুলো। এসব ফুটপাতের দোকানগুলোয় নারী-শিশুদের পোশাক, কসমেটিকস, জুতা, জুয়েলারি, ভ্যানিটি ব্যাগের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্য এবং ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, ঘর সাজানোর পর্দা, বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথের মতো পণ্যও বিক্রি হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের নিচে ফুটপাতে জুতা আর মেট্রো স্টেশনের নিচে ছেলেদের শার্ট-প্যান্টের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মার্চে তারা ফুটপাতে নামতে পারেননি। এপ্রিলেও পুলিশের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলে ফুটপাতে বসেছেন, কিংবা ফুটপাত ছেড়ে উঠেছেন। এজন্য প্রত্যাশামতো ব্যবসা হয়নি।

Advertisement

মেট্রো স্টেশনের নিচে জিন্স ও গ্যাবারডিন প্যান্ট বিক্রি করতে দেখা যায় আতিক হাসান নামে এক ব্যবসায়ীকে। তিনি বলেন, এবার পুরো রোজায় ১০ দিনও বসতে পারিনি। ব্যবসা ভালো হয়নি। কখনো বসতে পারি, কখনো পারি না। এভাবে ব্যবসা হয় না।

ভ্যানে পায়জামা বিক্রি করছিলেন শাহজাহান নামের একজন। তিনি বলেন, একেকজনের কাছে একেক রেটে বিক্রি করছি। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছি। আজ ভালো বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুলের সামনে মেয়েদের জামা-জুতার দোকানে প্রচুর ভিড় দেখা যায়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের নিচে ছেলেদের জুতা, স্যান্ডেল, লোফারের দোকানেও উপচেপড়া ভিড় ছিল।

আরও পড়ুন

Advertisement

শেষ মুহূর্তে টুপি-আতরের দোকানে ভিড় সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী

এসব মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, এই ফুটপাতে কিছুটা সাশ্রয়ীমূল্যে ভালো মানের পণ্য মেলে। আর একই জায়গায় সব পণ্য মেলে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, এক জায়গার মধ্যে নানা ধরনের পণ্য পাওয়ার সুবিধায় ক্রেতারা ভিড় করেন এই ফুটপাতে।

মিরপুর ১৩ নম্বর সংলগ্ন ফুটপাতে ঈদ উপলক্ষে বালিশের চাদর কিনতে আসা গৃহিণী সানজিদা আক্তার বললেন, বড় দোকানে চাদরের দাম অনেক বেশি। যে চাদর ৬০০ টাকা দিয়ে কিনলাম সেটা বাইরে ১২০০-১৫০০ টাকা।

ফুটপাতের বিক্রয়কর্মী মো. খালেদ বলেন, ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে মেয়েদের সব পোশাক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শাড়ি, কুর্তি, গাউন, টপস, লং ফ্রক, বোরকা মতোর গাউন, টু পিস ইত্যাদি।

মোহাম্মদপুর থেকে এই ফুটপাতে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন মেহের সুলতানা। তিনি বলেন, নিজের জন্য একটা পোশাক কিনেছি। এখানে এসেছি নিজের ও কয়েকজনের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে। বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দেবো। ফ্যাশন হাউজ থেকে কিনতে গেলে সবাইকে দিতে পারবো না। এখানে স্বল্পমূল্যে সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়।

এবার প্রত্যাশামতো ব্যবসা না হওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে পোশাক বিক্রয়কর্মী হাসমত হোসেন বলেন, এবার তো বসতে পারি নাই। তেমন কাস্টমার পাই নাই। তার ওপর সবকিছুর দাম বেশি। মানুষও চলতে হিমশিম খাচ্ছে।

এসএম/বিএ/এমএস