রাজনীতি

কোন পথে ১৪ দলীয় জোট? ঈদের পর সিদ্ধান্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে করলেও আসন বণ্টনে একলা চলো নীতিতে হেঁটেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে জোট নেতাদের মধ্যে ছিল ক্ষোভ। সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন খোদ শীর্ষ নেতারা। তবে শেষ মুহূর্তে গিয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

Advertisement

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টনের সময় জোটকে একটির বেশি আসন দিতেই চাইছিল না প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয় শরিক দলগুলোর সঙ্গে। জোট নেতাদের বক্তব্য ছিল- ‘নানান সংকটে সংগ্রামে একসঙ্গে ছিলাম। এখনো একসঙ্গে থাকতে চাই। আমাদের সম্মানজনক অবস্থান দেওয়া হোক।’

সে সময়ে জোট শরিক দলগুলো তাদের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট আসন চেয়েছে। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘গত ১৫ বছরে আপনাদের ক্ষমতার ভাগসহ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দলগতভাবে আপনারা শক্তিশালী হতে পারেননি। যাদের প্রার্থী করতে চাইছেন, এরা ভোটে পাস করে আসবে না। এদের দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো না।’

পাল্টা জবাবে শরিক নেতারাও ক্ষোভ ঝেড়েছেন। সংসদে অনুষ্ঠিত এক সভায় তো রীতিমতো হট্টগোল হয়েছে। বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় একাধিক নেতাকে চেঁচামেচি করতে দেখা গেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

১৪ দলের শরিকদের ৭ আসন দিলো আওয়ামী লীগ জোট না থাকলে আওয়ামী লীগ একা হয়ে যাবে ঢাকা ছেড়ে নৌকায় চড়ে বরিশালে মেনন

দফায় দফায় বৈঠক ও নানা নাটকীয়তার পর একটি থেকে ছয়টিতে ওঠে ১৪ দল শরিকদের আসন। জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টির দুটি ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পাঁচজনই হেরে যান। হারাধনের একটি ছেলের মতো বরিশাল-২ থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে জোট শরিকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হয়েছে। নির্বাচনের পরে সব দল অবস্থা পর্যালোচনা করছে। ঈদের পরে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকের পর পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।— হাসানুল হক ইনু

এ নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে। প্রকাশ্যে না বললেও তারা জোট সমন্বয়কের সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেছেন। জোট নেত্রীর সঙ্গেও শেয়ার করবেন। জানা গেছে, ঈদের পর শরিকদের নিয়ে বসবেন জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

এ নিয়ে জোট শরিকদের এক শীর্ষ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রথমেই দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বলেছি, আমাদের পক্ষ থেকে লিখিত দাবি উপস্থাপন করি। কী হলে আমরা থাকবো, না হয় থাকবো না। কিন্তু এটাতে সবাই সম্মত হয়নি। যার কারণে ফলাফল যা হওয়ার হয়েছে। এখন জোট নেত্রী ঈদের পর বসবেন। দেখা যাক, কী হয়!’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হয়েছে। নির্বাচনের পরে সব দল অবস্থা পর্যালোচনা করছে। আওয়ামী লীগও তার নীতি আলোচনা করছে। ঈদের পরে জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকের পর পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।’

আরও পড়ুন

৮ থেকে ২-এ নামলো ১৪ দলের শরিকদের আসন আপনারা কেউ রেহাই পাবেন না: ১৪ দল নেতাদের রব মশাল ছাড়লেন ইনু, সাইকেল ছেড়ে নৌকায় চড়লেন মঞ্জু

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা ১৪ দলে আছি। তবে এটার ফাংশনিং বা নন-ফাংশনিংয়ের এখতিয়ার ১৪ দলের সমন্বয়কের। এ বিষয়ে আপনারা আমাদের সমন্বয়ক আমু সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন।’

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘জোট এখনো বিলুপ্ত হয়নি। জোট বিলুপ্তি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ জোট হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায়। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না বলবেন- জোট থাকবে। অনেকে হয়তো জোট চায় না। কিন্তু এটা থাকবে কি না নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তবে, জোটের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। এটা আদর্শিক জোট, ক্ষমতার ভাগাভাগির আলোচনা আসে ঠিক। কিন্তু জোট সিট ভাগাভাগির জন্য হয়নি।’

আমাদের জোটে কোনো ক্ষোভ নেই। এটি আদর্শিক জোট, আন্দোলনের জোট। আসন ভাগাভাগির জোট নয়। এ জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে, থাকবে।— জাহাঙ্গীর কবির নানক

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের কাজ করছি। ঈদের জোট নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। হয়তো সামনে উপজেলা নির্বাচন আছে, দেশীয় আন্তর্জাতিক নানান বিষয় আছে— এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘ঈদের পরে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসবেন। তবে, এটির দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।’

তবে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের জোটে কোনো ক্ষোভ নেই। এটি আদর্শিক জোট, আন্দোলনের জোট। নির্বাচনী বা সিট ভাগাভাগির জোট নয়। এ জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে। এটি থাকবে।’

এসইউজে/এমএএইচ/এসএইচএস/এমএস