ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেট ঘুরে দেখতে এরমধ্যে ৬০ শতাংশ হোটেল অগ্রিম বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকরা। শেষ মুহূর্তে সিলেটের সবকটি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট শতভাগ বুকিং হয়ে যাবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
Advertisement
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে সিলেটে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের সঙ্গে যোগ দেবেন স্থানীয় পর্যটকরাও। এ অবস্থায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। জেলার সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। চলছে নানা রকমের প্রচার-প্রচারণা।
অন্যদিকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন এ জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি। পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরও পড়ুন
Advertisement
৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট দেশের পর্যটন নগরীগুলোর মধ্যে অন্যতম। চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝরনা, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা শীতল পানির স্রোতধারা, জলার বন, নদী-হাওর সবকিছুর এক অপূর্ব মিশেল পুণ্যভূমি সিলেটে। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা, সাদাপাথরের স্বচ্ছ পানির বিছানা, নীলনদ খ্যাত লালাখালের স্বচ্ছ পানি, রাতারগুলের প্রকৃতি, বিছানাকান্দির জলধারা, পান্তুমাইয়ের ঝর্ণাধারা ও শ্রীপুরের উঁচুনিচু চা-বাগানের দিকে তাকালে যে কেউ নিমিষেই হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির এমন মায়াবি রূপের বাইরে যান্ত্রিকতার শহরে ফিরলেও চোখে পড়বে ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ।
সুরমার তীর ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা সিলেট সার্কিট হাউজও সিলেটের ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে একটি। এসব কিছুর সৌন্দর্য উপভোগ করে ফেরার পথে কিংবা শুরুতেই হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের বিষয়টিও অনেক পর্যটক ও ভক্তের কাছে সৌভাগ্যের।
সিলেটের টিলা, পাহাড়, পাথর, ঝরনা আর চা-বাগানের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছরই ঈদ কিংবা বিভিন্ন ছুটির দিনে ভিড় জমান পর্যটকেরা। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে আবহাওয়া কেমন থাকবে সেটি নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। যদিও সারাদেশে দাবদাহের মধ্যে সিলেটের অবস্থা ভিন্ন। গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনও সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারের ঈদ ও বৈশাখের ছুটিতে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরমধ্যে অনেকে পর্যটক অগ্রিম হোটেল বুকিং করে রেখেছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতোমধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলো ঈদের আগেই বুকিং হয়ে যাবে। আবার অনেক পর্যটক তাৎক্ষণিক এসে হোটেল বুকিং করেন।
Advertisement
কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথরের খেয়াঘাটের দায়িত্বে থাকা তোয়াহির মিয়া জানান, সারাবছরই পর্যটক আসেন সিলেটে। রমজান মাসে খুব একটা পর্যটকরা আসেনা। আশা করি এবার ঈদে বেশ পর্যটক আসবেন। আমরাও পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতায় সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
জাফলংয়ের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ঈদ এবং বৈশাখের ছুটিতে সিলেটে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে। আশা করা হচ্ছে এ বছর ভালো ব্যবসা হবে। উপজেলার প্রশাসনের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে। তারা পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তায় কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
জৈন্তা হিলস্ রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তোফাল আহমদ বলেন, রিসোর্টে ৩০টি রুম রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি রুম বুকিং হয়েছে। বাকি সময়ের মধ্যে সবগুলো বুকিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারও পর্যটক সিলেটে আসবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাকি সময়ের মধ্যে সবগুলো হোটেল বুকিং হয়ে যাবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, আগামী কয়েক দিনও সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ও শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে। এ সময় পর্যটকদের সচেতন থাকার কথা বলেন তিনি।
আবহাওয়াবিদ সজিব আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে সিলেটে ঘুরতে আসলে সবসময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে রাখা উচিত। প্রয়োজনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগ করে আবহাওয়ার নেওয়া যাবে। যেহেতু কালবৈশাখী ও শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে সেহেতু সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের আবহাওয়া প্রায় একই রকম। যখন ভ্যাপসা গরম হবে তখন কয়েকদিন একই অবস্থা থাকবে। যখন বৃষ্টি হয় তখন কয়েকদিন বৃষ্টি থাকবে। এ তিনমাস আবহাওয়া প্রায় একই রকম।
এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, টুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।
তিনি বলেন, ঈদে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারেন সে লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও টুরিস্ট পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করবেন।
জাফলং জোন টুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ (ওসি) মো রতন শেখ বলেন, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক টুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, সারাবছর আমাদের জৈন্তার লালাখাল, লাল শাপলার বিল ও শ্রীপুরসহ সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকরা আসেন। এবারের ঈদে এসব পর্যটনস্পটগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। কেউ সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিলেটে এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে। ইতোমধ্যে টুরিস্ট পুলিশকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আহমেদ জামিল/আরএইচ/এমএস