ফিচার

স্বপ্ন বাড়ি যায় না নৈশপ্রহরীদের!

সানজিদা জান্নাত পিংকি

Advertisement

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত ৩২ একর এলাকা। লাল ইটের গন্ডিতেই অনাবিল হাসি-কান্নার কলতান। সেই হাসি-কান্না, আগমন ও প্রস্থানের সাক্ষী থেকে যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা ভবনগুলো আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তরুলতা। বিশালাকার এই বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন কিছু মানুষ।

ভোরে পাখি ডাকার আগেই ছুটে আসেন একদল বৃহন্নলা। সূর্য ডুবে যাওয়ার আগেই আবার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন রাত্রিকালীন প্রহরীদের কাছে। যখন পুরো ক্যাম্পাস আড়ষ্টতায় নিমজ্জিত, ঠিক তখনই হুইসেল বাঁজিয়ে নিশুতির নিস্তব্ধতাকে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তারা। সংখ্যায় তারা ১২ জন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গেট, বিল্ডিং, করিডোর মাঠের প্রান্তে তাদের উপস্থিত পুরো রাত জুড়েই।

সমস্ত নিরাপত্তা যারা ক্রমাগত নিশ্চিত করেই যাচ্ছেন তারাই যেন ক্যাম্পাসের উপেক্ষিত জন। যখন রঙিন উৎসবে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ঠিক তার বিপরীতে দেখা যাবে নিজের দায়িত্ব পালনে সোচ্চার মানুষগুলো চিহ্নিত জায়গায় অনড়ভাবে আছেন। ঈদ-পূজায় যখন সবাই নিজের পরিবারের সঙ্গে চমৎকার মুহূর্ত উপভোগ করছেন তখনই ঠিক মুদ্রার ওপিঠে নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত এই পর্দার আড়ালের মানুষগুলো। জনশূন্য ৩২ একরের একমাত্র অভিভাবক যেন তারাই।

Advertisement

এবার ঈদেও ঘটেনি এর ব্যতিক্রম। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রহরায় কাটবে মহিমান্বিত ঈদ-উল-ফিতর। এমনটাই বলছিলেন নৈশপ্রহরী আমিন হোসেন খান। বলিষ্ঠ কন্ঠের দায়িত্বশীল এই প্রহরীর থেকেই জানতে পারি তাদের গল্প। আমিন হোসেন ৬ বছর ৫ মাস ধরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘ঈদে আমরাও ছুটি পাই তবে সেটা ঈদের দিনে নয়। ঈদটা আমরা ক্যাম্পাসেই কাটাই। ভার্সিটি তো আমাদের রক্ষা করতেই হবে, এটাই তো আমাদের রিজিক। এই প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি করতে তো পারবো না। এটা দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদেরই। ঈমানের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

ঈদের আগে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করে সব গুছিয়েই ক্যাম্পাসে চলে আসেন আমিন হোসেনের মতো অন্যরাও। চাইলেই হয়তো পরিবারের সঙ্গে মিলে ঈদ কাটাতে পারতেন কিন্তু দায়িত্ব! দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। বিকাল ৫ টা থেকে ডিউটি টাইম শুরুর এক ঘণ্টা আগেই দেখা যায় ছোট্ট একটা ব্যাগ হাতে এসে মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেউ। কেউবা আবার টহল দিচ্ছেন শেষ সীমানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আনাচে-কানাচে ঘুরে নিশ্চিত করতে হয় নিরাপত্তা। পুরো রাত এভাবেই কেটে যায় তাদের কখনো লাঠি-টর্চ হাতে হুইসেল বাজিয়ে কখনো চিৎকার করে সহকর্মীকে ডেকে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছেন।

নিরাপত্তারক্ষীর এই কাজ ছোট গন্ডির হলেও বিসর্জন দিতে হয় নিজের জীবনের অনেকখানি বর্ণিল মুহূর্ত। প্রতি ঈদে দুইভাগে বিভক্ত হয় তাদের ছুটি। ১২ জনের কয়েকজন রোজার ঈদ তার পরিবারে সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাবেন, বাকিরা হয়তো যাবেন কোরবানির ঈদে। পরিবারের সঙ্গে আনন্দের উৎসব কাটাতে কে না চায়! কিন্তু দায়িত্ব যে তাদের পিছু ছাড়ে না। সূর্য ঢলতেই যে একলা ক্যাম্পাসকে সঙ্গ দিতে হবে।

Advertisement

বারো মাসে তেরো পার্বণে বর্ণিল সাজে মেতে ওঠে এ ক্যাম্পাস। সারা বছর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পালিত হয় বিভিন্ন উৎসব। মহাসমারোহে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুধু পর্দার আড়ালেই থেকে যান বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা মানুষগুলো।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

কেএসকে/জেআইএম