শান্তি ফেরানোর বিষয়ে দ্রুততা আনতে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। তবে সেক্ষেত্রে সরকার পরিচালনায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
Advertisement
ক্যানবেরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যস্থতার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অংশ হিসেবেই একমাত্র ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আসতে পারে।
তবে ওংয়ের মন্তব্যে চলতি বছরের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের একটি বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেছে। সেসময় ক্যামেরন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের সমর্থন ছাড়াই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাজ্যও।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযান সম্পর্কে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন অস্ট্রেলীয় ত্রাণকর্মী এবং আরও ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল দেশটি।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাতের ভাষণে পেনি ওং জানিয়েছেন, ‘সহিংসতার অন্তহীন চক্র’ ভাঙতে একমাত্র আশার আলো হতে পারে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান, যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা পৃথক দেশে পাশাপাশি বসবাস করবেন।
তিনি বলেছেন, এই পথ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দশকের পর দশক ধরে চলে আসা ব্যর্থতা এবং তার পাশাপাশি নেতানিয়াহু সরকারের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানো ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের গতি বাড়ানোর উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল এবং জায়নিস্ট ফেডারেশন অব অস্ট্রেলিয়া এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে, ফিলিস্তিনের বিষয়ে নেওয়া অস্ট্রেলিয়া সরকারের এমন সিদ্ধান্ত হবে অপরিপক্ব পদক্ষেপ।
বিরোধীদের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র সাইমন বার্মিংহাম বলেছেন, তারা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে না এবং প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের সরকার কয়েক দশক ধরে চলে আসা ‘দ্বিপক্ষীয় অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রনীতি’ ভঙ্গ করার হুমকি দিচ্ছে।
এক বিবৃতিতে সাইমন বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আগাম স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আলবানিজ সরকারের যুক্তিতে নিরাপত্তার আগে রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে সন্ত্রাসীরা বর্তমানে এই ভয়াবহ সংঘাতের সূচনা করেছে, এতে তাদেরই জয় হবে।
জায়নিস্ট ফেডারেশন অব অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট জেরেমি লেবলার বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে আলোচনার জন্য এখনো সঠিক সময় আসেনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র গঠনের কোনো আলোচনা বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার আগে হামাসকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের একটি নতুন প্রজন্মের উত্থান ঘটাতে হবে, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেবে না এবং ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে।
অন্যদিকে, পেনি ওং জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে ‘শত্রুকে পুরস্কৃত’ করা হবে, এই দাবি ‘ভুল’। তার মতে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের ওপর নির্ভরশীল এবং রাষ্ট্রের স্বীকৃতি হামাসকে দুর্বল ও দূরে সরাতে সাহায্য করবে।
প্রায় ১৪০টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো সেটি এখনো স্বীকার করেনি।
বর্তমানে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে থাকা ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে চলেছে জাতিসংঘ।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনি উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলায় ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটির বিরাট অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছেন।
এই সংঘাত বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও তা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/