পটুয়াখালীতে দিন দিন বাড়ছে বিনাচাষে আলুর আবাদ। এতে করে কম খরচে কৃষকরা বেশি ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় বাজারে আলুর পযাপ্ত চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। আর বিগত বছরের থেকে এ বছর কৃষকরা বেশি জমিতে আলুর আবাদ করেছেন বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
Advertisement
ধান ও ডাল উৎপাদনে পটুয়াখালীর কৃষকরা এগিয়ে থাকলেও আলু চাষে এই এলাকার কৃষকদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকার কৃষকরা আলুর আবাদ শুরু করেছেন। আলু আবাদে বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। এতে কৃষকদের চাষাবাদ খরচ যেমন কমছে তেমনি আলুর উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে এবার মোট ৫০ জন কৃষক বিনাচাষে আলুর আবাদ করছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সহযোগিতায় কৃষকরা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমাড়া গ্রামের কৃষক জলিল ফরাজী জানান, আমন ধান কাটার পর জমির মাটি যখন কিছুটা নরম থাকে তখন সেই জমিতে আলুর বীজ সারিবদ্ধভাবে রোপন করে দেওয়া হয়, এরপর তার উপর জৈব সার, ছাই, অন্যান্য সার, খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর আর তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। এতে চাষের খরচও হয় না। পাশাপাশি লবণাক্ততার কারণে অনেক সময় জমিতে লবণ উঠে যায় তা থেকেও এই পদ্বতিতে আলু চাষ করতে ঝুঁকি থাকে না।
Advertisement
আরও পড়ুন
তীব্র খরায় ঝরছে গুটি, শঙ্কায় লিচু চাষিরাএকই এলাকার কৃষক আবুল হোসেন গাজী বলেন, ‘আমি এবার ১৫ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছি, তবে এবার কিছু জমিতে নাভি পঁচা রোগ হলেও আমার ক্ষেতে কিছু হয়নি। ফলন ভালোই পাইছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আলু চাষে চার থেকে পাঁচটি চাষ দিতে হতো কিন্তু এই পদ্বতিতে চাষ করলে কোনো চাষ দিতে হয় না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় লবণাক্ততার কারণে অনেক জমিতে আমন ধানের পর অন্য কোনো ফসল চাষ করা যায় না। তবে এই পদ্বতিতে আলু মাটির উপরিভাগে চাষ করায় এবং খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় লবণাক্ততা থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়।
পাশাপাশি আলুর জন্য শীতের আবহাওয়াটা বেশি দরকার হয়, কিন্তু এই অঞ্চলে শীতের স্থায়ীত্বকাল কম থাকে। এ কারণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আলু ৭২ এবং ৭৩ এই এলাকায় চাষের উপযোগী হওয়ায় তা ৫০ জন কৃষকের মাঝে দেওয়া হয়েছে। আর এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
Advertisement
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘এ বছর পটুয়াখালী জেলায় ১০৩৭ হেক্টর জমিতে গোল আলুর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনাচাষেও অনেক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ২৫ হাজার মেট্রিকটন আলু উপৎপাদন হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি জেলায় আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আলুর ভালো চাহিদা থাকায় কৃষক ভালো দামেই আলু বিক্রি করতে পারছেন। আলু চাষ করে কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আর বিনাচাষে আলু আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেকটা কমবে।’
আরও পড়ুন
মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ কাঁঠালের ফল বা মুচি পচা রোধে করণীয়এএসএআর/কেএসকে/এএসএম