ভারতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। বুধবার (১০ এপ্রিল) থেকেই এই নতুন ধরনের ব্যবস্থাপনার যাত্রা শুরু হচ্ছে।
Advertisement
দেশটির আইন অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত পূরণ করতে পরিবর্তন আনা হয়েছে বিবিসির পরিচালনা কাঠামোতে। ইংরেজি ভাষার ডিজিটাল, টেলিভিশন এবং রেডিও মাধ্যমের সংবাদকর্মীরা সরাসরি বিবিসি’র লন্ডনের সদর দপ্তরের অধীনে কাজ করবেন।
আরও পড়ুন>>
বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে অভিযান মোদীবিরোধী বিবিসির তথ্যচিত্র বন্ধে টুইটার-ইউটিউবকে নির্দেশ দ্য মোদী কোয়েশ্চেন/ বিবিসির তথ্যচিত্র নিয়ে কতটা চাপে ভারতের প্রধানমন্ত্রীঅন্যদিকে, কালেকটিভ নিউজরুম নামে একটি নতুন, স্বাধীন, ভারতীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বিবিসি’র ভারতীয় ভাষার সার্ভিসগুলোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ বা প্রচারের কাজ করবে।
Advertisement
এখন থেকে বিবিসি হিন্দি পরিচালিত হবে কালেকটিভ নিউজরুমের অধীনে। এছাড়া মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, তামিল ও তেলেগু ভাষাভাষীদের জন্য সংবাদমাধ্যমটির পৃথক আউটলেট বা ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলোও কালেকটিভ নিউজরুমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
এর আওতায় আরও থাকছে বিবিসি নিউজ ইন্ডিয়া নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। ইংরেজি ভাষায় কন্টেন্ট আপলোড করা হবে সেখানে।
আরও পড়ুন>>
ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে ৬০ ঘণ্টার তল্লাশি বিবিসি’র অ্যাকাউন্টসে ‘গরমিল’ খুঁজে পেয়েছে ভারত ভারতে এবার বিবিসির বিরুদ্ধে মামলাবিবিসি ইন্ডিয়ার অফিসে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তল্লাশির এক বছর পরেই এই বিভাজনের পদক্ষেপটি নেওয়া হয়।
Advertisement
যুক্তরাজ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি সম্প্রচার করেছিল বিবিসি। মোদীর ব্যাপারে সমালোচনা তৈরি করা ডকুমেন্টারিটি ভারতে প্রচারিত হয়নি।
এটি সম্প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পরেই আয়কর কর্মকর্তারা হানা দেন বিবিসি ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া সেই সময়ে বলেছিলেন, অভিযানের সঙ্গে ডকুমেন্টারি কোনো সম্পর্ক নেই।
যদিও সরকার ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ডকুমেন্টারিটির শেয়ার বন্ধ করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
আরও পড়ুন>>
`ইন্ডিয়াস ডটার` প্রচারে বিবিসি`র ওপর নাখোশ ভারত মোদীকে নিয়ে তথ্যচিত্র/ প্রচার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল আমলে নিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টএরপর গত ডিসেম্বরে কালেকটিভ নিউজরুম গঠনের ঘোষণা দেয় বিবিসি। তখন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন রূপে কার্যক্রম পরিচালনায় ভারতীয় এফডিআই (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ) আইন মেনে চলার পাশাপাশি ভারত এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম হবে বিবিসি।
দেশটিতে বিবিসির সাপ্তাহিক দর্শক-স্রোতার সংখ্যা প্রায় সোয়া আট কোটি। তাদের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকারের কথাও ব্যক্ত করা হয় ঘোষণায়।
ভারতের গণমাধ্যমে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বিবিসির। ১৯৪০ সালে প্রথমে হিন্দি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই পথচলা। এবার বিবিসিরই চার সংবাদকর্মীর হাত ধরে আলোর মুখ দেখলো কালেকটিভ নিউজরুম। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ২০০ জন সাবেক বিবিসি কর্মী নিয়োগ পাচ্ছেন।
ভারত এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের জন্যও খবর সংগ্রহ ও সরবরাহ করবেন তারা। এর বাইরে থাকা ৯০ কর্মী সরাসরি বিবিসি’র টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনের জন্য সংবাদ সংগ্রহের কাজ করবেন। তাদের ভাষা মাধ্যম হবে ইংরেজি। লন্ডনে সদর দপ্তরে কর্মরত সম্পাদকদের কাছে রিপোর্ট করবেন এই সংবাদকর্মীরা।
বিবিসি নতুন কোম্পানিতে ২৬ শতাংশ অংশীদারত্বের জন্য আবেদন করেছে। তাদের জন্যও এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
কালেকভ নিউজরুমের প্রধান নির্বাহী রূপা ঝা বলেছেন, নতুন কোম্পানির লক্ষ্য ‘সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য, সৃজনশীল এবং সাহসী সাংবাদিকতা’।
তিনি বলেন, শিগগির একটি স্বাধীন সংবাদ সংস্থা হিসেবে দর্শক-শ্রোতা ও পাঠকের সামনে আবির্ভূত হবে কালেকটিভ নিউজরুম। এটি একটি তথ্যভিত্তিক, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কণ্ঠস্বরের সম্মিলনস্থল হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন রূপা।
সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/