জাতীয়

‘১৪১ টাকার ভাড়া ২০০ নিতাছি, কী অন্যায় করছি?’

বাড়তি ভাড়ায় গাবতলী ছাড়ছেন ঢাকার মানুষ ভাড়া বেশি নেয়, প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নামিয়ে দেয় শেষ সময়ে পকেট কাটছে বাসগুলো, অস্বস্তিতে ঈদযাত্রীরা

ঢাকা থেকে রংপুরের বাসভাড়া ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। তবে রংপুরের পীরগাছাগামী যাত্রী মোস্তাফিজের অভিযোগ, তার কাছ থেকে শ্যামলী পরিবহন নামের একটি বাস ভাড়া নিয়েছে ১৫০০ টাকা।

Advertisement

গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত বাসের ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা। তবে এ রুটে সেলফি পরিবহন যাত্রীপ্রতি নিচ্ছে ২০০ টাকা। গাবতলী থেকে সাটুরিয়া পর্যন্ত ১৪০ টাকা ভাড়া হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা করে।

একইভাবে ঈদযাত্রার শেষ দিকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলা ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন রুটের বাস যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

তবে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও ভিজিল্যান্স টিমের দাবি, তালিকা মেনেই নেওয়া হচ্ছে ভাড়া। বিআরটিএ ও মালিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ভিজিল্যান্স টিমের দাবি, কোথাও কোনো বাড়তি ভাড়া আয়ের অভিযোগ তারা পাননি।

Advertisement

এদিন গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদযাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। পরিবহন শ্রমিকদের হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী খুঁজতে দেখা গেছে। তবে প্রতিটি বাসই যাত্রী পূর্ণ করে টার্মিনাল ছাড়ছে।

আরও পড়ুন

যানজট কমতে শুরু করেছে গাজীপুরের দুই মহাসড়কে মাওয়া টোলপ্লাজায় মানুষের ঢল, মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি

রংপুরগামী যাত্রী মোস্তাফিজ জাগো নিউজকে জানান, অন্যসময় ৮০০ টাকা ভাড়া নিলেও আজ নিয়েছে ১৫০০ টাকা। টিকিটের টাকা নিয়েছে, বাসে উঠলে টিকিট দেবে বলে শ্যামলী কাউন্টার থেকে জানিয়েছে।

শ্যামলী কাউন্টারের ম্যানেজার রিপন বলেন, আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না। এ রুটে ৮৭০ টাকা চার্টের ভাড়া। আমরা সেটাই নিচ্ছি।

Advertisement

গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাটুরিয়াগামী যাত্রী নিচ্ছে সেলফি পরিবহন। যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে পরিবহনটির একাধিক বাস। পরিবহনটির একজন কর্মী বলেন, ঈদের সময় ভাড়া একটু বাড়তি। কারণ বাসগুলো ফিরছে ফাঁকা।

রাকিব নামের এক যাত্রী বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়াগামী সেলফি পরিবহনে সারাবছর ভাড়া ১২০ টাকা। তবে ঈদের সময় পরিবহনটি বেশি ভাড়া নেয়। সবাই দেখছে। পুলিশ আছে, ম্যাজিস্ট্রেট আছে, কেউ কিছু বলেন না।

ওই টার্মিনাল এলাকার সার্বিক বিষয় দেখভালের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুতাসসিম বিল্লাহ।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়গুলো তদারকি করছি। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত আমাদের তালিকা অনুযায়ী ভাড়া ১৮৬ টাকা।

একটি বাসকে জরিমানাগাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া রুটে ২০০ টাকা নিতে দেখা যায় এসবি লিংক পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসকে। পরে বাসে থাকা যাত্রীরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন।

এসময় বাড়তি ভাড়া আদায় করায় পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। একই সময় বাসটিকে ৫০০ টাকা জরিমানাও করেন তিনি।

তবে ম্যাজিস্ট্রেটের সতর্কবার্তা ও জরিমানায় মেজাজ হারান ওই পরিবহনের কর্মচারীরা। তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করা পরই বাস থেকে সব যাত্রীকে নামিয়ে দেন পরিবহনটির সংশ্লিষ্টরা। যার নেতৃত্ব দেন পরিবহন শ্রমিক মো. হান্নান। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তাদের ভাড়ার তালিকা দেখান তিনি।

আরও পড়ুন

বিআরটিসির বাসেও চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় গণপরিবহনে ভাড়ার দ্বিগুণ ‘ঈদ বকশিশ’

মো. হান্নান বলেন, দেখেন, আপনারা তো শিক্ষিত মানুষ। সাটুরিয়া পর্যন্ত ভাড়া ১৪১ টাকা। ২০০ টাকা নিতাছি। কী অন্যায় করছি? এরা ম্যাজিস্ট্রেট ডাইকা আনছে। সব যাত্রী নামাইয়া দিছি।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের এমন আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। মো. হাসিব নামে একজন যাত্রী বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহারটা দেখলেন? এরা বেশি ভাড়া নেবে, এদের কিছু বলাও যাবে না। প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। বাসে ৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। কেউ কিছু করতে পারলো না, সবাইকে নামিয়ে দিলো। আমরা আসলে পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি।

জননী পরিবহন কাউন্টারের কর্মচারী মোহন বলেন, ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা ৭৫০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি৷ চার্টের ভাড়া ৭৫৫ টাকা, অন্যসময় ভাড়া নেই ৬৫০ টাকা। এখন ফেরার সময় সব বাস ফাঁকা ফিরছে, অন্যান্য সময় ফাঁকা আসতে হয় না।

গাবতলীতে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাসগুলো চার্ট মেনেই ভাড়া নিচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহনের বাসকে এদিন গাবতলী থেকে দূরপাল্লার রুটে চলাচল করতে দেখা গেছে। গাবতলী মোড়ে বিআরটিসির দোতলা বাসকে রংপুর ও আশপাশের অন্যান্য জেলার যাত্রী তুলতে দেখা যায়। চন্দ্রা থেকে নিউমার্কেট-চাঁনখারপুর হয়ে সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করে ঠিকানা পরিবহন। এদিন ঈদ সামনে রেখে সেই বাসকে বগুড়াগামী যাত্রী তুলতে যেতে দেখা গেছে।

এসএম/এমকেআর/এমএস