অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকার দক্ষিণাংশ থেকে হঠাৎ সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে মাত্র একটি ব্রিগেড রেখে বাকি সব সৈন্য ফিরিয়ে নিয়েছে তেল আবিব। কিন্তু হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে ছয় মাস ধরে ফিলিস্তিনি উপত্যকায় তাণ্ডব চালানো ইসরায়েল হঠাৎ এভাবে পিছু হটলো কেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
Advertisement
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, মূলত, চলতি বছরের শুরু থেকেই গাজায় সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনছিল ইসরায়েল। অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় রোধে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর চাপ ক্রমেই বাড়ছিল।
আরও পড়ুন>>
অবশেষে পিছু হটলো ইসরায়েল, দক্ষিণ গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজার হাজার ইসরায়েলির বিক্ষোভ গাজা অভিযানে ৬০৪ ইসরায়েলি সেনা নিহতহামাসকে নির্মূলে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থল অভিযান চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনায় ওই অভিযান পিছিয়ে যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
Advertisement
ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। সেখানে ইসরায়েল স্থল অভিযান চালালো ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েল নিজেও অবশ্য শত্রুভাবাপন্ন দেশ ইরানের হামলার শঙ্কায় রয়েছে। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে ইরানের এক শীর্ষ জেনারেলসহ ১১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনার চরম প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তেহরান।
যুদ্ধ কি তবে শেষের পথে?না, অন্তত ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ওমের দোস্তরি তেমনটি মনে করেন না। তার বিশ্বাস, ইসরায়েলের এই সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং এর অর্থ এই নয় যে, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
শিগগির কায়রোয় শুরু হতে চলেছে যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, এই আলোচনায় অংশ নেবেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও শিন বেটের প্রধানরা। আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য এরই মধ্যে মিশরীয় রাজধানীতে পৌঁছেছেন মার্কিন তদন্ত সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম বার্ন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি।
দোস্তরির মতে, মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের মধ্যে দক্ষিণ গাজা থেকে স্থল সেনা প্রত্যাহার ইসরায়েলকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-মুক্তির আলোচনায় সহায়তা করবে।
জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির এ গবেষকের বিশ্বাস, রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের সরিয়ে নেওয়ার পরপরই বেঁচে থাকা হামাস সদস্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিরবে ইসরায়েলি বাহিনী।
তিনি বলেন, আমার মতে, বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে রাফাহ শহরে বাকি হামাস ব্রিগেডগুলোকে ধ্বংস করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর সঙ্গে অবশ্য একমত নন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি। ইসরায়েলের এই সেনা প্রত্যাহারের ঘটনা নতুন কোনো অভিযানের ইঙ্গিত নয় বলেই মনে করছেন তিনি।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা যতটা বুঝতে পারি এবং তাদের (ইসরায়েল) প্রকাশ্য ঘোষণা অনুসারে, এটি সত্যিই সৈন্যদের বিশ্রাম ও সুস্থতার বিষয়। আমরা এটিকে নতুন কোনো অভিযানের ইঙ্গিত বলতে পারি, তেমন কিছু নয়।
কেএএ/