কয়েকদিন পরেই ঈদুল ফিতর। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। গত সপ্তাহে কম ফিরলেও দু-একদিনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এদিকে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর বাস কাউন্টারে।
Advertisement
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার যাত্রীর চাপ কম থাকলেও শুক্র ও শনিবার কিছুটা বেড়েছে। তবে আজ যাত্রীর ব্যাপক চাপ রয়েছে। সঠিক সময়ে ট্রেন-বাস-লঞ্চের যাত্রীরা ঢাকা ছাড়লেও বেশ কয়েক জায়গায় ভোগান্তির খবর পাওয়া গেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোগান্তি এড়াতে কয়েক দিন আগে থেকেই মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তির। বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও ধোলাইপাড় এলাকায় দেখা যায়, অন্য সময়ের চেয়ে বাস ও যাত্রীর ভিড় তুলনামূলক বেশি। তবে ঈদযাত্রা নিয়ে সায়েদাবাদ এলাকার চিরাচরিত দৃশ্য সেটির দেখা মেলেনি।
Advertisement
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, দূরপাল্লার ও নিকটবর্তী রুটে আসতে-যেতে তারা তেমন যানজটের সম্মুখীন না হলেও সড়কে ধীরগতি এবং পদ্মা সেতুতে চাপ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ অভিমুখী ‘হিমালয়’ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমনিতে আধাঘণ্টা পরপর আমাদের গাড়ি ছেড়ে যায়। কিন্তু ঈদযাত্রায় যাত্রী অনেক বেশি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর গাড়ি ছাড়ছে।
উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেখা যায়, ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া-খুলনা-পিরোজপুর অভিমুখী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের কাউন্টারে ভিড়। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে যাত্রীদের তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. শাহীনুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গাড়ি ছাড়বে পৌনে ১১টায়। ঝামেলা এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউন্টারে চলে এসেছি। দেখি খুব একটা সমস্যা নেই। গরমে একটু কাহিল হলেও সময়মতো খুলনা পৌঁছানোর আশায় বসে আছি।’
Advertisement
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের ৫ জামাত ঈদে প্রস্তুত রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্র ঈদ শেষে ১৭ এপ্রিল ফেরার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজসায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে খুলনাগামী ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল্লাহ বলেন, গত ২০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছি। এখন যারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই আগেই টিকিট নিয়েছিলেন। গাড়ির সব আসনেই যাত্রী যাচ্ছে।
একই পরিবহনে খুলনাগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, অগ্রিম টিকিট কিনতে পারিনি। এখন কাউন্টার থেকে বলছে অপেক্ষা করতে হবে। এই প্রচণ্ড গরমে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় কে জানে। এখন তারা দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি চাচ্ছে।
সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে শ্যামলী ও এনআর ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার আমান বলেন, ভোর থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে গাড়ি যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে মানুষ যেভাবে যান তার চেয়ে যাত্রী একটু বেশি ছিল।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, গত শুক্র ও শনিবারের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় নিয়ে গাড়ি ছাড়ছে।
এমন যুক্তিতে পরিবহন সংশ্লিষ্টারা বলেন, এখানকার বেশিরভাগ পরিবহন দক্ষিণাঞ্চমুখী। পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের সময় একটু ঝামেলা হচ্ছে। তাছাড়া খুব একটা সমস্যা নেই। রাস্তায় সামান্য যানজট রয়েছে।
এদিকে মাগুরা, যশোর, বেনাপোল, বরগুনা, বরিশাল, কুয়াকাটা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, নাজিরপুর, বাগেরহাট, জয়পাশা লাহুড়িয়াগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিজান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ভোর থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আনুমানিক ২০টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। এরপর যাত্রীর চাপতো আছেই।
তিনি বলেন, আমরা শুধু টিকিট বিক্রি করি, গাড়ির হিসাবটা সঠিকভাবে জানি না। তবে যাত্রীর ব্যাপক চাপ রয়েছে। এখন ফিরতি গাড়ি এলে তারপর যাত্রী নিয়ে যাবে। আমাদের সবকটি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে গেছে, তাই এখন গাড়ি ছাড়তে বিলম্ব হতে পারে।
একই পরিবহনের চালক রিপন মিয়া বলেন, আজ পদ্মা সেতুতে যানজট নেই। পুলিশ-প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।
পটুয়াখালীগামী যাত্রী আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, যেখানে নিয়মিত ভাড়া ৬০০ টাকা, এখন ৯০০ টাকা। টিকিটও পাচ্ছি না। ফরিদপুরের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, যেখানে ২০০ টাকা ভাড়া, আজ সেখানে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।
সায়েদাবাদ কাউন্টারে খাগড়াছড়িগামী ইকোনো বাসের যাত্রী রাসেল জাগো নিউজকে জানান, ফোন করে অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন। কাউন্টারে এসে তাৎক্ষণিক টিকিট মিলছে না। কয়েকজনকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এ কাউন্টার থেকে সে কাউন্টারে ঘুরতে দেখেছেন। তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িসহ আশপাশে রুটে বাড়তি ভাড়া রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এফএইচ/এমআরএম/জেআইএম