দেশজুড়ে

নিহত ৩ বন্ধুকে পাশাপাশি দাফন, পরিবারের শোকের মাতম

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের মৃত নুর হোসেনের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ (২২)। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সেহেরি খাওয়া শেষে ঈদের কেনাকাটা করতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি ও তার ১০ বন্ধু। ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন তারা।

Advertisement

সকাল সাড়ে ৭টায় নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশন থেকে মেইলে ট্রেনে ওঠেন তারা। ফেনী স্টেশন ছাড়ার পর দ্বীন মোহাম্মদ, রিফাত ও সাজ্জাদ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে গিয়ে বসেন। সাড়ে ৮টার দিকে ফাজিলপুর মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনটি পৌঁছালে বালুর ট্রাকের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এতে তিন বন্ধু গুরুতর আহত হন।

সহপাঠীরা উদ্ধার স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তারা তিনজনই মারা যান। পরে মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসা হয়। শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় আজিজিয়া মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে তিনজনকে একই কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

নিহত রিফাত (১৭) ও সাজ্জাদ (১৭) যথাক্রমে একই গ্রামের রুহুল আমিন ও ইয়াসিনের ছেলে। এ ঘটনায় আরও তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন বরিশালের উজিরপুর থানার আবুল হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক মিজানুর রহমান (৩২), কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনোহরপুর এলাকার বাসিন্দা ট্রেনের যাত্রী আবুল খায়ের (৪০) ও তার ছেলে মো. আশিক (১৪)।

Advertisement

শনিবার দুপুরে শাকতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট এক শিশুকে কোলে নিয়ে গাছতলায় বসে বিলাপ করছেন দ্বীন মোহাম্মদের দাদি আমিরেন নেছা ও ফুপু হোসনে আরা। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা। সবাই চোখে-মুখে বিষাদের ছাপ। এ যেন এক শোকের গ্রাম।

আরও পড়ুন:

ফেনীতে ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৬ ট্রেনে ওঠার আগে তোলা ছবিটি এখন শুধু স্মৃতি, ৩ জনই না ফেরার দেশে

নিহত দ্বীন মোহাম্মদের মা আমিরন নেছা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেহেরি খেয়ে দ্রুত দ্বীন মোহাম্মদ ঘর থেকে রেব হয়। যাওয়ার সময় সে বলে, মা ডাক্তারের কাছে যাইয়েন। আমি আসি। তবে কোথায় যাচ্ছে, কী কাজে যাচ্ছে কিছুই বলেনি। সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে শুনি আমার ছেলে মারা গেছে।’

৩১ দিন বয়সী নাতি আবদুর রহমানকে কোলে নিয়ে আহাজারি করছিলেন আমিরন নেছা। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে স্বামী মারা যায়। আমার পরিবারের একমাত্র উপাজনকারী ছিল ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ। আজ সেও চলে গেলো। এখন আমাদের আর আমার নাতির ভবিষ্যৎ কী হবে?’

Advertisement

বোন হোসনে আরা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তিন বোনের এক ভাই ছিলেন দ্বীন মোহাম্মদ। ভাই আজ সবাইকে একা করে চলে গেলো। এখন কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার? কে দায়িত্ব নেবে তার একমাত্র ছেলে শিশু আবদুর রহমানের?’

নিহত রিফাতের বাবা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিফাত ছিল আমার পরিবারের বড় ছেলে। আমি গ্রামে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাই। এ অবস্থায় গত দুই বছর ধরে সে আমাকে সহযোগিতা করে আসছিল। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে ঈদের কেনাকাটার জন্য রিফাত তার মায়ের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়। শুক্রবার ভোরে আমাদের না জানিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কেনাকাটার জন্য ট্রেনযোগে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল। ৯টার দিকে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর পায় রিফাত ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’

রুহুল আমিন বলেন, মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন রেলগেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবহেলার কারণে আমার ছেলেসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আমি এ ঘটনার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহত সাজ্জাদ হোসেনের বাবা ইয়াসিন জাগো নিউজকে বলেন, আমি একজন অটোরিকশা চালক। কোনোমতে পরিবার নিয়ে চলছি। সাজ্জাদ ওয়ার্কশপে কাজ করতো। আর্থিকভাবে আমাকে সহায়তা করতো। এ কথায় বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এ বিষয়ে লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ উল্লাহ বাহার জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় চৌদ্দগ্রামের তিন যুবক নিহতের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জেআইএম