জামালপুরের মাদারগঞ্জে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়ে গেছে বেশকিছু সমবায় সমিতি। এতে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা গ্রাহকরা।
Advertisement
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন নামে গড়ে ওঠে দুই শতাধিক সমবায় সমিতি। এগুলোর মধ্যে মাদারগঞ্জ আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতি, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতি, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতি, নবদ্বীপ বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনতা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি অন্যতম অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রাখেন। সবচেয়ে বেশি টাকা জমা রাখেন আল-আকাবা এবং শতদল বহুমুখী সমিতিতে। তবে শুরুর দিকে গ্রাহকদের মুনাফা দিলেও বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এতে সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে।
মাদারগঞ্জ উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অডিট রিপোর্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত আল-আকাবার আমানত ৪১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা, শতদলের ২২১ কোটি ৮৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ টাকা, নবদ্বীপের ২৫ কোটি ৮০ লাখ, স্বদেশের ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫১ টাকা। এছাড়া আরও ১০-১৫টি সমিতির আমানত এক কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে। তবে বাস্তবে এসব সমিতির মূলধন ও সম্পদের পরিমাণ সমবায় কার্যালয়ের হিসাবের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি।
সরেজমিন দেখা যায়, মাদারগঞ্জ শহরের বিভিন্ন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন সমবায় সমিতি। একটি ভবনেই পাওয়া যায় অন্তত ১০টি সমিতির কার্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রেখেছেন গ্রাহকরা। এখন প্রায় সব সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। আর গ্রাহকরা লভ্যাংশ তো দূরের কথা, জমানো আমানত কীভাবে ফিরে পাবেন সেই আশায় প্রতিদিন সমিতির কার্যালয়ের সামনে এসে ভিড় করছেন।
Advertisement
আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির গ্রাহক শিল্পী আক্তার জানান, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেদের সাড়ে ছয় লাখ টাকা জমা রাখেন। আমানতের বিপরীতে প্রতিমাসে ভালো মুনাফা পাওয়ার আশায় তার মা আনোয়ারা বেগমও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতিতে জমা রাখেন। হঠাৎ করে গত এক বছর ধরে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি অফিসে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখেন।
মাদারগঞ্জ কেন্দ্রীয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্লাহ রিমু বলেন, টাকা নিয়ে সমিতির অন্য পরিচালকরা ঝামেলা করছে বুঝতে পেরে আমি কেন্দ্রীয় বমুমুখী সমবায় সমিতি এবং রূপসী বাংলা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি থেকে কয়েকমাস আগে পদত্যাগ করেছি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে জামালপুর জজ কোর্টের আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাকদের কাছ থেকে দুই হাজার (অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় হাজার কোটি) কোটি টাকারও বেশি টাকা আত্মসাত করেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এতগুলো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত আত্মসাত করতে পেরেছে। তাই তারা এর দায়ভার এড়াতে পারেন না।
জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, এতদিন সমিতিগুলো অবৈধ লেনদেন করছিল। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খানকে শোকজ করা হয়েছে। এসব সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
Advertisement
জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান বলেন, সমিতিগুলো এতদিন আইন মেনে আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল কি না সেটা দেখা হবে। এছাড়া এতগুলো প্রতিষ্ঠানকে কেন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাও দেখা হবে।
নাসিম উদ্দিন/এসআর/জেআইএম