দেশজুড়ে

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গাইবান্ধার জনজীবন

সারাদেশের মত গাইবান্ধায় বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এর মধ্যেই চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কয়েকগুণ বেশি লোডশেডিং চলছে। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলা শহরসহ সাত উপজেলার জনজীবন।

Advertisement

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে জানান তারা।

জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বায়ুর আদ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সব বয়সী মানুষ। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। গ্রাম কিংবা শহরে দিন-রাতের অধিকাংশ সময়ই চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। এতে করে ঠিকমত সেচ পাম্পগুলো চালানো যাচ্ছে না। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কচুয়ার খামার গ্রামের কৃষক হাবিজার রহমান বলেন, বোরো ধান আমাদের প্রধান ফসল। এ সময়টা সব সময় জমিতে পানি রাখতে হয়। পানি না থাকলে ধানের সমস্যা হবে। কয়েক দিন ধরে কারেন্ট আসে আর যায়। পুরো দিনে এক বিঘা জমিতে পানি দেওয়া যায় না। এ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি।

Advertisement

গোবিন্দগঞ্জের মেঘারচর গ্রামের কাইয়ুম বলেন, এখন বিদ্যুৎ যায় না মাঝে মাঝে আসবে সেই অপেক্ষা করতে হয়। খুব সমস্যা আছি।

এদিকে ঈদ ঘিরে জেলা-উপজেলার মার্কেট, ছোট-বড় শিল্প কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ততা বেড়েছে। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে ক্রেতারাও দোকানে যেতে চায় না। আবার ঈদ ঘিরে বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোও ঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাঙ্খিত পণ্যও সরবরাহ করতে পারছেন না।

গাইবান্ধা শহরের চৌধুরী মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, কি দিন আর কি রাত বিদ্যুৎ শুধু আসে আর যায়। ঈদের এই সময়টা ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এ সময়ে লোডশেডিংয়ের হওয়ায় বিপাকে পড়েছি। শহরের এসকেএস প্রিন্টার্সের ম্যানেজার তাওহিদুর রহমান বলেন, ঈদ ঘিরে অনেক মালামালের অর্ডার আছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ সময় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রাহকদের মাল ডেলিভারি নিয়ে বিপাকে আছি।

সেমাই তৈরির শ্রমিক সায়দার রহমান জানান, একঘণ্টা দুইঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ আসে। এরপর আধাঘণ্টা থেকে আবার চলে যায়।

Advertisement

অন্যদিকে রোজার মধ্যে গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে গাইবান্ধায় ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করেছ। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের সিজু মন্ডল বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তারাবিহ নামাজের সময় আরেক দফা গেছে। রাত ২টা ২১ মিনিটে লোডশেডিং ছিলো একঘণ্টা। ভোর সাড়ে ৫টায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়। এবারও বিদ্যুৎ ছিলো না একঘণ্টা।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় ‘ভয়ঙ্কর আজাব’ শুরু হলো। মশার যন্ত্রণায় বাইরে বসে থাকারও উপায় নেই। এই কষ্ট বলে বোঝাতে পারবো না।

রিকশাচালক মো. মাইনুর মিয়া বলেন, সূর্যের অনেক তাপ। রোদে শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিকাল ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়। শরীর দুর্বল হয়ে আসে। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।

শহরের পলাশপাড়ার মিলন খন্দকার বলেন, বাতাসে যেন আগুন উড়ছে। প্রচণ্ড গরম। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এই গরমে বাইরে যেমন বের হওয়া যাচ্ছে না, তেমনই ঘরেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে।

গাইবান্ধা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের স্কিনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বয়স্কদের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ হার্ট অ্যার্টাকের সম্ভাবনা থাকে।

শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা রাসেল বলেন, একদিকে সিয়াম সাধনার মাস অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। কর্মব্যস্ততা শেষে যে বাসায় ফিরে কোথায় স্বস্তিতে থাকব, সেখানে দিনে ও মধ্যরাতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিফ বলেন, গাইবান্ধা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫ মেগাওয়াট। সে হিসেবে ঘাটতি রয়েছে আড়াই মেগাওয়াট। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিং হচ্ছে।

গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই গরম বাড়ছে। সে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে অফিস, প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কলকারখানায় আগের চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তবে আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।

এএইচ/জেআইএম