জাতীয়

পশ্চিমবঙ্গের আদলে ১৬ হাজার কিশোরী পাবে সরকারি বাইসাইকেল

‘সবুজ সাথী’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রতি বছর সরকারিভাবে বাইসাইকেল পান কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ আদলে প্রাথমিকভাবে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত ১৬ হাজার কিশোরীর মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া পিছিয়ে পড়া ছাত্রীরা পাবে এসব বাইসাইকেল। প্রতিটি সাইকেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।

Advertisement

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে আট জেলায় (রাজবাড়ী, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও বরগুনা) বাইসাইকেল পাবে ১৬ হাজার কিশোরী। ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনও প্রকল্পের ওপর ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আমরা পিইসি সভাও করেছি। প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীকে সাইকেল দেওয়া হবে। এটা এক ধরনের পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের সুফল মিললে দেশব্যাপী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।’

Advertisement

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, স্কুলগামী ছাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, কিশোরী ক্ষমতায়ন, সহজ ও নির্ভয়ে পথচলা। নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রবেশের পথ সুগম করা, কিশোরীদের নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করবে এ প্রকল্প।

বাইসাইকেল দেওয়ার মাধ্যমে আটটি বিভাগের আটটি জেলার ৪৮টি উপজেলার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিতকরণে সহায়তার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং ১৬ হাজার স্কুলগামী দরিদ্র, মেধাবী ছাত্রীর স্কুলে যাতায়াত নিরাপদ ও সহজ করা হবে। স্কুলগামী ছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ করার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা বাড়িয়ে নেতৃত্বের মনোভাব সৃষ্টি এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কিশোরীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে এ প্রকল্প।

আরও পড়ুন

Advertisement

সাহসী বালিকাদের দুরন্ত বাইসাইকেল সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় নড়াইলের শতাধিক ছাত্রী ৬০ কোটি টাকায় রংপুরে আরএফএলের দ্বিতীয় বাইসাইকেল কারখানা

লক্ষ্যষষ্ঠ শ্রেণির ১৬ হাজার স্কুলগামী দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রীকে ১৬ হাজার বাইসাইকেল, পাম্পার ও লকচেইন দেওয়া।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশল

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে রাজবাড়ী, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরগুনা, পঞ্চগড় ও শেরপুর জেলার ৪৮টি উপজেলায় ১৬ হাজার ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ও দরিদ্র স্কুলগামী ছাত্রী বাইসাইকেল পাবে। প্রকল্প মেয়াদে প্রতি উপজেলায় ৩৩৩টি বাইসাইকেল দেওয়া কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রতি বছর প্রতি উপজেলার প্রত্যন্ত তিনটি স্কুলে ৩৭টি করে মোট ১১১টি বাইসাইকেল দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে খাগড়াছড়ি জেলার আটটি উপজেলায় ১৬টি অতিরিক্ত বাইসাইকেল দেওয়া হবে।

কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আমরা পিইসি সভাও করেছি। প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীকে সাইকেল দেওয়া হবে। এটা এক ধরনের পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের সুফল মিললে দেশব্যাপী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।- মোহাম্মদ কামাল হোসেন

নানা কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে দাবি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মোট জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশের কল্যাণে কাজ করছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নারীদের উন্নয়নে মূল সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ ও সার্বিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে।

একটি দেশের সুষম ও স্থায়িত্বশীল আর্থ-সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। আর এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে এবং তাদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতা কর্মমুখী করতে না পারলে দেশে সার্বিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

সরকার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে নারীর জন্য গেজেটেড, নন-গেজেটেড ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন অনেক বেড়েছে। চ্যালেঞ্জিং অনেক কর্মক্ষেত্রে যেমন- বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, সেনা বিভাগসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারী সাফল্যের সঙ্গে চাকরি করছে।

বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর একমাত্র সংস্থা যার সব সুবিধাভোগী এবং অংশগ্রহণকারী নারী। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে আইনের মাধ্যমে নারী পুনর্বাসন বোর্ডকে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তর করা হয়।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন, মহিলা বিষয়ক সেল ও জাতীয় মহিলা উন্নয়ন একাডেমিকে একীভূত করে মহিলা বিষয়ক পরিদপ্তর গঠন করা হয়। ১৯৯০ সালে মহিলা বিষয়ক পরিদপ্তরকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়।

এমওএস/এএসএ/জেআইএম