আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে অভিজাত বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতেও এখন চলছে জমজমাট বেচাকেনা। পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, বাচ্চাদের কাপড়চোপড় কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকেই। তবে ভিন্ন চিত্র রাজধানীর শাড়ির বাজারে। ঈদকেন্দ্রিক আগের মতো ভিড় নেই শাড়ির দোকানগুলোতে। এসব দোকানে শাড়ির নতুন নতুন কালেকশন থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, শহরকেন্দ্রিক নারীদের মধ্যে শাড়ি পরার প্রবণতা কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে বেচাকেনায়।
Advertisement
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য। মার্কেট-ফুটপাত সব জায়গায় ক্রেতাদের ভিড়। মানুষের ভিড়ে সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। দোকানে দোকানে ঘুরে ক্রেতারা দামাদামি করে পছন্দের পোশাক কিনছেন। তবে এর মধ্যে ভিন্ন চিত্র ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে। রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এই শাড়ির বাজারে দোকানিরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের শাড়ির কালেকশন রেখেছেন তারা। সুতি কাপড়ের পাতলা শাড়ি থেকে শুরু করে কাতান, জামদানি, কাঞ্জিভরম, টাঙ্গাইলের তাঁত, সিল্কসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের শাড়ি রেখেছেন তারা। তবে নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা। এর বড় কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গরমের কারণে অধিকাংশ নারী এবার শাড়ির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আবার শহুরে নারীরা শাড়ির চেয়ে থ্রি-পিস পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এরপরও বিক্রি একেবারেই নেই সেটিও বলা যাবে না।
তবে ক্রেতারা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে বাড়তি দাম নিচ্ছেন নিউমার্কেট এলাকার শাড়ি বিক্রেতারা। স্বাভাবিক সময়ে যে কাতান শাড়ি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হতো সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার কাঞ্জিভরম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এতদিন যে জানদানি শাড়ি ২ হাজার টাকায় কেনা যেত সেটির দাম এখন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য শাড়িও ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
সালমা নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘নিজের জন্য শাড়ি কিনবো না, এবার থ্রি-পিস কিনেছি। শাশুড়ির জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। কিন্তু শাড়ির দাম অনেক বেশি।’
মনির হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘পরিবার এবং আত্মীয়দের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। গত বছরের তুলনায় শাড়ির দাম অনেক বেড়েছে। এত দাম দিয়ে শাড়ি কিনতে হবে ভাবিনি। গতবছর যে শাড়ি দুই হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সে শাড়ি এক হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বেশি দামে কাপড় কিনে আনায় তাদেরকে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা লিটন সরকার বলেন, ‘ঈদে বিক্রি হচ্ছে তবে তেমন বেশি না। আমাদের শাড়ির দোকানে ক্রেতা এমনিতেই কম। শহরের নারীরা শাড়ি তেমন একটা কিনতে চায় না। যারা শাড়ি কিনতে আসছেন অধিকাংশই গ্রামের বাড়ির পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য নিচ্ছেন।’
Advertisement
দাম বেশি রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি রাখছি না। সুতার দাম বেশি হওয়ায় কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেশি। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মার্কেটের আরেক বিক্রেতা দুলাল ইসলাম বলেন, ‘বিক্রি মোটামুটি, অতটা ভালো নেই বললেই চলে। অন্য মার্কেটের তুলনায় আমাদের শাড়ির দোকানে কেনাকাটা কম। তবে সন্ধ্যার পরে একটু কেনাকাটা বাড়ে।’
এনএস/কেএসআর/এএসএম