বিশেষ প্রতিবেদন

রাজধানীতে মানুষ বাড়লেও বাড়ছে না গণপরিবহন

পেশা বা কাজের জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করছেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু তিলোত্তমা এই শহরে বহিরাগত মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও বাড়ছে না গণপরিবহনের সংখ্যা। ফলে পরিবহন সংকটে ভুগছেন নগরবাসী।   প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে রাজধানীর সড়কে কর্মজীবী মানুষের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও বাস না পাওয়ায় এবং সময় মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে না পারায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এছাড়া বাসে উঠা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ তো রয়েছেই। যুদ্ধে জয়ী না হয়ে কেউবা ঝুলছেন বাসের গেটে।গণপরিবহনে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী নারীরা। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসে উঠতে না পেরে অনেকে রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা করে কর্মস্থলে পৌঁছান।বিকেলে অফিস ছুটির পরে মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্থান, প্রেসক্লাব, ফার্মগেইট, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার এলাকায় গণপরিবহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করার দৃশ্য প্রতিদিনের। এ সময় হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে গিয়ে আহতও হন অনেকে।প্রতিদিন পল্টন থেকে অফিস শেষ করে মিরপুরে বাসায় ফেরেন বেসরকারি চাকরিজীবী আশিকুর রহমান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে অফিস যাওয়ার পথে এবং বাসায় ফেরার সময় বাসের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমার মতো অসংখ্য যাত্রী প্রতিদিন এভাবে অপেক্ষা করে। তারপর কোনো মতে বাসে উঠতে পারলেও বাদুর ঝুলা হয়ে যেতে হয়। এদিকে, পরিবহন মালিকরা বলেছেন, যাত্রী বাড়লেও রাজধানীতে যানজটের কারণে বাসের ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। এ জন্য নতুন গাড়ি রাস্তায় নামানোর ব্যাপারে মালিকদের আগ্রহ কম। এছাড়া চাঁদাবাজি-হয়রানির কারণেও পরিবহন ব্যবসা নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা।তাদের অভিযোগ, রাস্তায় গাড়ি নামলেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি। এসব কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে অনুমোদিত অনেক পরিবহন তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে।এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব মোজাম্মেল হক জাগো নিউজে বলেন, প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় এসে কাজ করেন, আবার চলে যান। আর ঢাকায় বসবাসরত মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ গণপরিবহন দরকার, তার চেয়েও গণপরিবহন ৫০ শতাংশ কম আছে। তাই যাত্রীদের প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়।তিনি আরো বলেন, এছাড়া নতুন করে গণপরিবহন রাস্তায় নামানোর ব্যাপারে মালিকদের আগ্রহ কম। চাঁদাবাজি-হয়রানির কারণে গণপরিবহন বাড়ছে না। জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।এক প্রশ্নের জবাবে বাস ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহর জানান,  রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবসা ‘অলাভজনক’ হওয়ায় কেউ এ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় না। যানজটের কারণে বেশিরভাগ দিন অল্প সংখ্যক ট্রিপ পাওয়া যায়। এ সমস্য ছাড়াও চাঁদাবাজি-হয়রানির কারণেও পরিবহন মালিকরা নতুন করে গণপরিববহন নামাচ্ছেন না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবহন সংকটে যাত্রী ভোগান্তির কথা আমাদের মাথায় আছে। নাগরিকের পরিবহন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ এই প্রতিষ্ঠানেরই (বিআরটিএ) দায়িত্ব। নানা প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে পরিবহন খাতে একচেটিয়া প্রাধান্য বজায় রাখছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস। পরিকল্পিতভাবে বিআরটিসির বাসগুলো রাস্তায় নামালে দেশবাসীর পরিবহন সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিভিন্ন সময়ের অভিযানে হঠাৎ করেই রাজধানীর রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি। দিনের পর দিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা লক্করঝক্কড় পরিবহনগুলো জব্দ হয়ে গেলে বাসমালিকের তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও মূল ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী সাধারণদের।এছাড়া অনেকটা সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় এই খাত, তাই প্রভাবশালীদের ভিড়ে নতুন করে কোনো মালিক বাস নামালেও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। সে কারণে অনেক মালিক নতুন করে গণপরিবহন রাস্তায় নামানো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।এএস/এসকেডি/আরএস/এমএস

Advertisement