দেশজুড়ে

পানির দামেও বিক্রি হচ্ছে না তরমুজ

ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। পাইকারি আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা। আড়তদারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে দুই লিটার বোতলজাত খাবার পানির দামেও (৪৫ টাকা) মিলছে না। ক্ষেত থেকে কেটে বিক্রি করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে তরমুজ চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

Advertisement

ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর চটকি মারা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর সামছুদ্দিনে সরেজমিন দেখা গেছে, মাঠজুড়ে তরমুজের সমাহার। কেউ কেউ দলবেঁধে মাঠ থেকে তরমুজ কাটছেন। আবার কেউ কাটা তরমুজ একসঙ্গে করে গুনছেন। কেউবা পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রির জন্য স্টিমার বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন।

তরমুজ চাষি জাহাঙ্গীর আলম ও মিজানুর রহমান জানান, তারা এ বছর প্রায় ২৫ এক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন ছিল না। তাই এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পাইকারি আড়তে তরমুজের দাম খুবই কম। এতে খরচ উঠে আসবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান কৃষকরা।

আক্ষেপ প্রকাশ করে তারা বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির দুই লিটার বোতলজাত খাবার পানি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। অথচ এতো কষ্ট, পরিশ্রম ও টাকা খরচ করে প্রতিপিস তরমুজ আড়তে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়। এতেই বোঝা যায়, পানির দাম থাকলেও তরমুজের দাম নেই।

Advertisement

তরমুজ চাষি আবু সিদ্দিক ও এনায়েত বলেন, ক্ষেতে তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে বাজারদর কম থাকায় আমাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কদিন আগেও আড়তে ৩-৫ কেজি ওজনের প্রতিপিস তরমুজ ১২০-১৫০ টাকা, ৬-৮ কেজি ওজনের ১৬০-২২০ টাকা ও ১০-১২ কেজি ওজনের প্রতিপিস তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২৩০-২৮০ টাকায়। কিন্তু এখন ৩-৫ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর ১০-১২ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা দরে।

৯৫ শতাংশ কৃষকের তরমুজের ফলন দেরিতে আসায় তারা কম দামে তরমুজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান এ দুই কৃষক।

ভোলার শহরের খালপাড় এলাকার তরমুজের পাইকারি আড়তদার মো. হেলাল জানান, রোজার শুরুতে বাজারে তরমুজের চাহিদা বেশি থাকলেও তরমুজ খুবই কম ছিল। তাই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামও ছিল বেশি। কিন্তু এখন ভোলার সব কৃষকের ক্ষেত থেকে তরমুজ উঠেছে। আড়তগুলোতে তরমুজের বিপুল সমাহার। খুচরা বিক্রেতার অভাবে অনেক তরমুজ পচে যাচ্ছে। তাই দাম কমে গেছে।

Advertisement

শহরের কাঁচাবাজার এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. সুমন ও সদর রোডের কামাল হোসেন বলেন, ক্রেতার অভাবে সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় অনেক তরমুজ পচে যাচ্ছে। আবার আড়ত থেকে যে দামে কেনা তার চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি লাভে বিক্রি করতে গিয়েও ক্রেতা পাওয়া যায় না। এতে আমাদের লস হয়ে যাচ্ছে। তরমুজ পচে যাচ্ছে।

ভোলার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোস্তফা সোহেল জানান, এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। সব ক্ষেত থেকে একসঙ্গে উঠতে শুরু করায় আড়তগুলোতে বিপুল পরিমাণ তরমুজের সমাহার হয়েছে। তবে কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান সেজন্য আমরা সবধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এসআর/এএসএম