দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে এই প্যানেল থেকে জয়ী নির্বাচিত অন্য তিন সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।
Advertisement
এছাড়া দায়িত্ব নিয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক পদে বিজয়ী অ্যাডভোকেট শাহ মনজুরুল হকসহ ১০ জন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারা।
দায়িত্ব গ্রহণের আগে দেওয়া বক্তব্যে ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কখনো ব্যালটপেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি, যা এবার ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন স্বচ্ছ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে।
Advertisement
এদিন দায়িত্ব গ্রহণের সময় বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির মাহবুব উদ্দিনের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেননি।
এর আগে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত ও সমমনা আইনজীবীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহাবুদ্দিন খোকন এক মতবিনিময়ে সভা করেন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক আলহাজ গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আইনজীবী মহসিন রশিদ, শাহ আহমেদ বাদল, ওয়ালিউর রহমান খান, মনির হোসেন, গোলাম মোস্তফা, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, মির্জা আল মাহমুদ, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, কাজী জয়নাল আবেদীন, শরীফ ইউ আহমেদ, ওয়াহিদুজ্জামান দিপু ও জাহাঙ্গীর কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
ফোরামের প্রভাবশালী নেতার রহস্যময় আচরণ জানালেন খোকনতবে ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নিলেন ব্যারিসটার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
আইনজীবী ফোরামের ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্র্নিবাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে/আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি/আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।
আরও পড়ুন
ব্যারিস্টার খোকনকে সভাপতির দায়িত্ব না নিতে চিঠিচিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালটপেপার ছিনতাই করে নিয়ে যান। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।
চিঠিতে বলা হয়, এ মামলায় ওসমান চৌধুরী, সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যারিস্টার মো.রুহুল কুদ্দুসকে (কাজল) গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা দুই সপ্তাহের মতো কারাভোগ করেছেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালটপেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের (বিএনপির বিজয়ী চারজন) নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের এই ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এফএইচ/ইএ