আইন-আদালত

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই দায়িত্ব নিচ্ছেন ব্যারিস্টার খোকন

দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ (১ নম্বর হল রুমে) হলে নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তার সমর্থকরা এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত জানান। পরে ব্যারিস্টার খোকন সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্তের কথা জানান।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. গিয়াস উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়ালি উর রহমান খান, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মেহেদী, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় শুরু হয়েছে। এতে ২০২৪-২৫ সেশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পাশাপাশি নবনির্বাচিত নেতারা কথা বলবেন।

Advertisement

এর আগে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের নতুন বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

আরও পড়ুন

দায়িত্ব গ্রহণ নাকি বর্জন জানাবেন খোকন ব্যারিস্টার খোকনকে সভাপতির দায়িত্ব না নিতে চিঠি

চিঠিতে সই করেছেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। চিঠির অনুলিপিটি দলের মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের (দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত) কাছে পাঠানো হয়।

এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয় বিএনপি-জামায়াতপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য নীল প্যানেল। অন্যদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় পায় আওয়ামী লীগপন্থি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সাদা প্যানেল।

Advertisement

গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ী হন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ী হন- সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সদস্য পদে মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।

নির্বাচনে এ দুই প্যানেল ছাড়াও সভাপতি পদে মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান), সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া এবং মো. সাইফুল ইসলাম কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।

আরও পড়ুন

সব পদের ভোট পুনর্গণনা চান মাহবুব উদ্দিন খোকন ফোরামের প্রভাবশালী নেতার রহস্যময় আচরণ জানালেন খোকন

চিঠিতে আরও বলা হয়, এ মামলায় ওসমান চৌধুরী, সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুসকে (কাজল) গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা দুই সপ্তাহের মতো কারাভোগ করেছেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের (বিএনপির বিজয়ী চারজন) নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে।

সেখানে বলা হয়, আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের এ ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই মধ্যে আমাদের সভাপতি পদপ্রার্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন, যা দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে ২৪ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ৯ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের (খোকনসহ চারজন) এ মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।

এফএইচ/এমকেআর/জিকেএস