একুশে বইমেলা

স্বাধীনতার গল্প: দেশপ্রেমের অনন্য আখ্যান

ছোটবেলা থেকেই গল্প আমার খুব পছন্দের। বিশেষ করে দাদা-দাদি এবং নানা-নানির মুখ থেকে শুনতে বেশ ভালো লাগে। শৈশবে কত যে গল্প শুনেছি, ভাবতেই ভালো লাগে। এবার বইমেলায় প্রকাশিত সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘স্বাধীনতার গল্প’ বইটি পড়তে বসেও সেই ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম।

Advertisement

হিম শীতে একটু রোদ উঁকি দিলেই বেরিয়ে পড়তাম খেলাধুলার জন্য। ডিসেম্বর বলে পুরো মাস ছুটি, নভেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ। হরেক রকম খেলার মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা ছিল ভীষণ প্রিয়। সহপাঠী, চাচাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের ভিড় জমে যেত উঠানে। খেলায় একপক্ষ থাকতো মুক্তিবাহিনী, আরেক পক্ষ রাজাকার। আমি কখনোই রাজাকার সাজতে চাইতাম না। কেন যেন অপরাধী অপরাধী লাগতো নিজেকে। তবুও খেলতে হলে মাঝে মধ্যে সাজতেই হতো।

আমাদের যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র ছিল কাঠ ও কলার ডগা দিয়ে তৈরি করা বন্ধুক। বোমা বানাতাম শুকনো ধুলা পলিতে বেঁধে। তবে সব সময় পরাজিত হবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, সেভাবেই আগাতাম। দীর্ঘ ১৯-২০ বছর পর আবার সেই পুরোনো স্মৃতি মনের মাঝে দোলা দিয়ে উঠলো ‘স্বাধীনতা’ গল্পটি পড়ে। তখন এর সারমর্ম বুঝতাম না। কিন্তু বাঙালি হার মানতে জানে না; সেটি উপলব্ধি করতে পারতাম।

লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের লেখা গল্পে রোজান প্রশ্ন করার মতো একজন কবি ভাইয়া পেলেও আমি কাউকে প্রশ্ন করতে সাহস পেতাম না। যদিও সেই ভয়টা কেটেছে মাধ্যমিকের ৮ম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে। ‘স্বাধীনতা’ গল্পটি শিশুতোষ হলেও বড়রা পড়লে ফিরে যাবেন বাল্যকালে। স্বাধীনতার ইতিহাস সংবলিত গল্পটি খুব সাবলীলভাবে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন লেখক। মাত্র ৪-৫টি চরিত্রে আর শাহীনুর আলম শাহীনের অসম্ভব সুন্দর আঁকিবুঁকিতে চমৎকার রূপ পেয়েছে গল্পটি। যা আপনার শিশু ও আপনার মন কাড়তে বাধ্য।

Advertisement

আরও পড়ুন

জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের অনন্য দলিল তাঁরকাটার ভাঁজে: এক বীরাঙ্গনার কাহিনি

অন্যদিকে একই বইয়ের আরেকটি গল্প ‘ভাষাপ্রেম’। এই গল্পে উঠে এসেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা। যেহেতু ছোটদের জন্য লেখা; সেহেতু সহজ-সরল ভাবে সাজানো এই গল্পও। গ্রামে বড় হয়েছি বিধায় কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করার স্বাদ বহুবার পেয়েছি। তবে গল্পে যে দিকগুলো ফুটে উঠেছে, তার মধ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপট খুঁজে পাই। আমরা বাংলা ভাষাভাষি হয়েও ছেলে-মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর, ইংরেজিতে কথা বলার যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করি।

আমরা যারা নব্বই দশক ও তার আগে জন্মেছি, তাদের স্মৃতি অদ্ভুত রকমের সুন্দর। তাদের প্রশ্ন করতে হয়নি। তারা এমনিতেই অনেক গল্প শুনতো। কিন্তু এখন আর সেই সুন্দর দিন খুঁজে পায় না শিশুরা। তাই চোখেমুখে হাজারো প্রশ্ন জমা থাকে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেসব প্রশ্নও যেন চাপা পড়ে যায়। হারিয়ে যায় অজানা সমুদ্রে।

লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ তার স্বাধীনতার গল্প বইতে ‘স্বাধীনতা’ ও ‘ভাষাপ্রেম’ এই দুটো গল্পের মাধ্যমে বর্তমান প্রেক্ষাপটকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা বড়রা পড়লে ফিরে যাবেন তাদের হারানো শৈশবে। আর ছোটরা জানতে পারবে মাতৃভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।

Advertisement

বইয়ের নাম: স্বাধীনতার গল্প লেখক: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: শাহীনুর আলম শাহীন প্রকাশনা: কিডজ কারাভানমূল্য: ২০০ টাকা।

এসইউ/জিকেএস