টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে বেড়েছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলো।
Advertisement
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহত দরপতনে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অনেক কমে গেছে। ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ কমেছে। তবে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনো পুরোপুরি ফেরেনি। তাই দুই দিনের ঊর্ধ্বমুখীতার ওপর ভিত্ত করেই বলা যায় না বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলছেন, ঈদের আগে শেয়ারবাজারে আরও দুই কার্যদিবস লেনদেন হবে। সাধারণত ঈদের আগে শেষ কয়েক কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ কম থাকে। কারণ ঈদের খরচের জন্য যারা শেয়ার বিক্রি করেন, তারা সাধারণত রোজার মাঝামাঝি সময়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেন। ফলে সেই সময় বিক্রির চাপ বেশি থাকে এবং বাজারে দরপতন দেখা যায়। এবারও তেমনিটি হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহ লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রথম তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক কিছুটা বাড়ে। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলে। তবে দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার ও তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার আবার বড় দরপতন হয়। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে তিন’শ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। তবে বুধবার আবার মূল্যসূচক বাড়ে।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২২২টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৯৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, গত সপ্তাহে এবং চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ঈদকেন্দ্রিক শেয়ার বিক্রির বেশি চাপ ছিল। ফলে গড়পড়তা সব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। শেয়ার বিক্রির সেই চাপ কিছুটা কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বাজারে ক্রেতাও ফিরেছে। তবে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরেছে। দুই দিনের ঊর্ধ্বমুখীর মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরে আসা সম্ভব না।
তারা বলেন, ঈদের আগে আরও দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে। এই দুই কার্যদিবস যদি বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে এবং ঈদের পর সপ্তাহখানেক যদি বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে তাহলে আবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করবে। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয়, তাহলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।
Advertisement
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সম্প্রতি দরপতনে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। আবার ঈদকেন্দ্রিক শেয়ার বিক্রির যে চাপ ছিল সেটিও কমে এসেছে। বিক্রির চাপ কমায় বাাজরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গুজবের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত না। বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সার্বিক তথ্য ভালো করে পর্যালোচনা করা উচিত। সঠিক তথ্য জেনে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারলে শেয়ারবাজার ভালো ভালো মুনাফা করা সম্ভব।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৬ কোটি ৭৫ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৩৩ কোটি ৯৬ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শহিনপুকুর সিরামিকের ১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, লাভেলো আইসক্রিম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফু-ওয়াং সিরামিক, গোল্ডেন সন এবং ম্যাক্সন স্পিনিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৫টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমআরএম/জিকেএস