বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের জানানো সংহতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় বুয়েটের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার ও আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার বিভিন্ন চেষ্টা দেখা যায়। শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত আমাদের দাবির বিপরীতে আমাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা এবং প্রপাগান্ডার শিকার হতে হচ্ছে। অতি সম্প্রতি আমরা জানতে পারি যে, ৩ এপ্রিল বুয়েট ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান স্পষ্টকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থানের দাবিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সংগঠনটি বলছে, ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এ সংকটপূর্ণ মূহুর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এ ‘রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতি’ কে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছি। ২০২০ এর জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে তখনো আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ ‘পৌনঃপুনিক-১৫’ তাদের এ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ভিসি ও ডিএসডব্লিউ বরাবর তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনো এর প্রতিবাদ জানাই এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখবো।
তারা বলেন, পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের দাবি এবং অবস্থান ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তবে আমরা তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবো। আমরা আবারো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ছাত্ররাজনীতি-ই ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে। অতএব এটি করতে চায় এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান সমান এবং অনড়। আরও উল্লেখ্য যে, হিজবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।
Advertisement
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দলের ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলসমূহের বিপক্ষে আছি এবং থাকবো। আমাদের এ অবস্থান সব দল ও মতের ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, বুয়েটে বর্তমানে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই। পাশাপাশি আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরাভার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ।
তারা বলেন, যে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাস শতশত ছাত্রদের ভোগান্তি, আর্তনাদ অবশেষে সনি, দ্বীপ এবং আবরারের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতায় আমরা সেই অর্জন হারাতে রাজি নই। তাই আমাদের বর্তমান আন্দোলনে হস্তক্ষেপ, অথবা আন্দোলন পুঁজি করে যেকোনো স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা এবং একই সঙ্গে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোনো সম্ভাব্য প্রচেষ্টা আমরা ধিক্কার জানাই।
আরেকটি বিষয় দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, ক্যাম্পাসে বর্তমানে রাজনৈতিক মহল দ্বারা প্রভাবিত হাতেগোনা গুটিকতক বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে। প্রমাণ ছাড়া এমন বানোয়াট অভিযোগেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করছি, তারা ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা থেকে সরে এসে বৃহত্তর স্বার্থকে গ্রহণ করে নেবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বুয়েটে গত দুই দিনব্যাপী চালানো অনলাইন জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে বলেন, আমরা আমাদের নিজ নিজ ইন্সটিটিউশনাল মেইল ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করি। যার ফলাফল হচ্ছে, সর্বমোট ছাত্রসংখ্যা ৫৮৩৪ জন। ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে সই দেন, ৫৬৮৩ জন। অর্থাৎ, ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। সুতরাং আমাদের অবস্থানের যথাযথতা এখানে প্রমাণিত।
Advertisement
হাসান আলী/এমআইএইচএস/জিকেএস