আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমতে আজ নাজাতের দশকের ৩য় দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
Advertisement
পবিত্র এ মাস অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস। আমাদের সবার উচিত হবে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত করা আর রাতগুলোকে ইবাদতে জাগ্রত রাখা। সাধারণভাবে আমরা দেখতে পাই এ মাসে সবাই কম বেশি ইবাদত করেই থাকে। তবে এমাসে মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আল্লাহর আদেশ মেনে চলার প্রতি চেষ্টা করে। সবাই বিভিন্ন ধরনের পুণ্যকর্ম করতে আগ্রহ রাখে আর সবাই চায় সব ধরনের মন্দকাজকে পরিত্যাগ করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের নেক আমলগুলো যেন শুধু রমজান মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে বরং সারা বছর জুড়ে অব্যাহত রাখি।
আল্লাহতায়ালা রমজানের রোজা আমাদের জন্য এ কারণেই ফরজ করেছেন যাতে আল্লাহতায়ালার সমস্ত আদেশ নিষেধ মেনে চলে যেন আমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারি। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারি।
পবিত্র কুরআনে যেভাবে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান সেই মাস; যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যে কুরআন মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। আর তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট হেদায়েত। যা হক ও বাতিলের পার্থকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পবে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। আর যে (এ মাসে) অসুস্থ কিংবা মুসাফির হবে সে অন্য সময় এ সংখ্যা (রমজানের রোজা) পূর্ণ করে নেবে। তোমাদের জন্য যা সহজ আল্লাহ তাই করেন। আর যা তোমাদের জন্য কঠিন তা তিনি করার ইচ্ছা করেন না। যেন তোমরা নির্ধারিত (রমজান মাসের) সময়টি সম্পূর্ণ করতে পার এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, কেননা আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যাতে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
Advertisement
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে লাভ করার জন্য রোজা একটি বড় মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে বারবার তাকওয়া অর্জন করার কথা বলা হয়েছে, এই তাকওয়া আমরা কীভাবে অর্জন করবো? আমাদেরকে জানতে হবে তাকওয়া কাকে বলে আর তাকওয়া কি জিনিস? তাকওয়া অর্জনের মূল কথা হলো, আমরা যেন সকল প্রকার পাপ থেকে বিরত থাকি, পাপ বর্জন করতে চেষ্টা করি। আর এই চেষ্টা এমন এভাবে করতে হবে যেভাবে কেউ ঢালের আড়ালে এসে নিজেকে নিরাপদ করতে চেষ্টা করে।
বড় কোনো বিপদ থেকে আমরা যেমন নিজকে বাঁচাবার জন্য অনেক চেষ্টা করি। তেমন ভাবে আল্লাহ বলেছেন, রোজা রাখ, যেভাবে রোজা রাখার নির্দেশ রয়েছে। আর আমরা যদি সেভাবে রোজা রাখি, তবেই তাকওয়ার পথে এগিয়ে গিয়ে উন্নতি লাভ করতে পারবো।
নতুবা হাদিসে আছে, তোমাদেরকে অভুক্ত রাখার কোন ইচ্ছা আল্লাহতায়ালার নেই। আল্লাহ তো বলেছেন, তোমরা যে সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি করেছ, তার কুফল থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য আমি তোমাদের জন্য পথ দেখিয়ে দিয়েছি। যেন তোমরা বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করে পুনরায় আমার কাছে আস। তোমরা রমজানের এ পবিত্র মাসে যথাযথভাবে রোজা রাখ, আমার খাতিরে তোমরা হালাল বস্তু, হালাল জিনিস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাক, তোমাদের এ প্রচেষ্টার ফলে আমি তোমাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করব এবং শয়তানকে বেঁধে রাখব। তোমরা যেন এ ভয়ের কারণে রোজা পালন কর, রোজার আড়ালে নিজেকে রেখে তাকওয়া অবলম্বন করে নিজেদেরকে নিরাপদ কর, যেন শয়তান তোমাদের ক্ষতি সাধন করতে না পারে।
এটাই হলো তাকওয়া এবং ঢাল-এর আড়ালে গিয়ে শয়তানের আক্রমণ থেকে এবং পাপকর্ম করা থেকে নিজকে বিরত রাখার চেষ্টা আর রোজা রাখার ফলে আমরা নিরাপদ হতে পারব। এমন এক সংগ্রাম করে আমরা আল্লাহর নিরাপদ আশ্রয়ে এসে যাব। এরপর এ আশ্রয়স্থল এই তাকওয়াকে সৎকর্ম দ্বারা আল্লাহর আদেশ নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে আরো মজবুত করতে হবে। যারা পূর্বে থেকেই পুণ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের এই পবিত্র রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার মান আরো বৃদ্ধি করে খোদার নৈকট্য লাভ করতে সহজতর হবে।
Advertisement
এ মাসে প্রতিটি আমলের সাওয়াব আল্লাহপাক অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। (কানযুল উম্মাল)
আমাদের মনে রাখতে হবে রমজান মাসের রোজা কেবল এতটুকুই না যে, নির্দিষ্ট সময় খানাপিনা থেকে বিরত থাকলেই আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবো। বরং তাকওয়া অর্জন করতে হলে প্রকৃত অর্থে রোজাও রাখতে হবে আর বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতেও রত হতে হবে। সেই সাথে সব ধরনের মন্দ কাজ ছেড়ে দিতে হবে। আর আমরা যদি এই মাসে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হই তবেই না আমাদের মন হবে নির্মল আর অর্জিত হবে তাকওয়া। তাই মন নির্মল ও তাকওয়া অর্জনে রোজার বিকল্প নেই। আল্লাহপাক আমাদের রোজা গ্রহণ করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।masumon83@yahoo.com
এইচআর/এমএস